Results for ঐতিহাসিক ও প্রত্নতত্ত্ব নামকরণ

লালদিঘি নামকরণ ইতিহাস ও বিবরণ

April 16, 2019

অবস্থানঃলালদিঘি চট্টগ্রাম শহরের মাঝখানে কোতয়ালী থানায় অবস্থিত।


নামকরণ ও ইতিহাসঃ বিভিন্ন সুত্র ও তথ্য থেকে জানা যায়, আগে এখানে একটি ছোট্ট জলাশয় ছিল। ব্রিটিশ শাসনামলের শুরুর দিকে এটা খুড়ে দিঘি তৈরী করা হয়। দিঘির পাড়ে ছিলো বড় বড় কৃষ্ণচুড়া গাছ। ফুল ফোটার মৌসুমে দিঘির পাড় ফুলে ফুলে লাল হয়ে থাকতো সম্ভবত সেই জন্যে এই দিঘির নাম হয়েছে লাল দিঘি।  


অন্যান্য সুত্রে জানা যায়, ১৭৬১ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি চট্টগ্রামের শাসনভার লাভ করে। সেই সময় এন্তেকালী কাছারি অর্থাৎ জমি সংক্রান্ত তহসিল অফিসে (বর্তমানে মেট্রোপলিটন পুলিশ অফিস) লাল রঙ দেয়া হয়েছিল। এটিকে লোকজন তাই “লালকুঠি” বলে চিনত। ব্রিটিশ সরকার লালকুঠির উত্তরপূর্ব দিকে একটি কারাগার নির্মাণ করেছিল। এটিকেও লাল রঙ করা হয়েছিল এবং তাই এটি “লালঘর” নামে পরিচিতি লাভ করে। এই ভবন দুটো লাল পাগড়ী পরিহিত ব্রিটিশ পাহাড়াদারেরা পাহাড়া দিত। অনেকেই মনে করেন এ কারনেই ভবনগুলোর নাম লালকুঠি ও লালঘর। লালকুঠি ও লালঘরের পাশে একটা ছোট পুকুর ছিলো। চট্টগ্রামে ইংরেজ শাসনের সূচনালগ্নে পুকুরটিকে বড় করে দিঘিতে পরিণত করা হয়। পুকুরটি লালকুঠি ও লালঘরের মধ্যখানে অবস্থিত হওয়ায় স্থানীয় জনসাধারণের কাছে লালদিঘি নামে পরিচিত হয়। লালদিঘির চারপাশে পরবর্তীকালে কতিপয় স্থাপনা, মাঠ নির্মিত হয়। এ দিঘির পাড়ে মেলাও বসে।


লালদিঘী নিয়ে আরো কিছুঃ


লালদিঘির রিকেট ঘাটঃ লালদিঘির পশ্চিম পাড়ে রিকেট ঘাট নামে পাকা ঘাট ছিল। তৎকালীন ব্রিটিশ আমলে চট্টগ্রামের কমিশনার স্যার হেনরী রিকেটস (১৮৪১-৪৮)-এর স্মৃতি রক্ষার্থে চট্টগ্রামের তৎকালীন জমিদারগণ এ ঘাট নির্মাণ করেন।


লালদিঘির ময়দানঃ পূর্বে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ সদর দপ্তরের পাহাড়ের পাদদেশ থেকে পশ্চিমে পরীর পাহাড়ের পাদদেশ পর্যন্ত সমগ্র সমতল এলাকা সেকালে মিউনিসিপ্যাল ময়দান নামে খ্যাত ছিল। উনিশ শতকের শেষার্ধে উত্তর-দক্ষিণ রাস্তাটি নির্মিত হলে মিউনিসিপ্যাল ময়দান দুভাগে ভাগ হয়ে যায়। পূর্বাংশ সাধারণের খেলার মাঠে রূপান্তরিত হয়। মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয় স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত হলে তখন সে মাঠ মুসলিম হাই স্কুল খেলার মাঠ নামে পরিচিত হয়। এখন এ মাঠ লালদিঘির ময়দান। এ ময়দানকেই কেন্দ্র করে বিভিন্ন সভা সমিতির জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। এখানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের জাতীয় এবং স্থানীয় সভা অনুষ্ঠিত হয়।


লালদিঘির বলী খেলাঃ বলীখেলা এক ধরনের কুস্তি। বল থেকে বলি। কুস্তিগীরদের চট্টগ্রামের ভাষায় ডাকা হয় বলী বা বলশালী। চৈত্র, বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ মাসে চট্টগ্রামে বলী খেলার আয়োজন করা হয়। গ্রাম বাংলার লোকজ বলী খেলা এখন চট্টগ্রাম শহরের অন্যতম জনপ্রিয় খেলা। চট্টগ্রামের সর্ববৃহৎ বলীখেলা অনুষ্ঠিত হয় লালদিঘির ময়দানে প্রতি বাংলা সনের ১২ বৈশাখে। হাত পায়ের কসরত আর শক্তি দিয়ে অপরজনকে মাটিতে ফেলে পিঠ ঠেকাতে পারলেই জিতে যান একজন বলী। ১৯০৯ সালে লালদিঘিতে বলী খেলার প্রচলন করেন ব্যবসায়ী ও সমাজকর্মী আবদুল জববার সওদাগর। তাই জববারের বলীখেলা নামেও অভিহিত হয় এ কুস্তি খেলা।


লালদিঘির বৈশাখী মেলাঃ  বলীখেলা বা কুস্তি খেলা উপলক্ষে লালদিঘির চারপাশে রাস্তাজুড়ে বসে চার-পাঁচ দিনের বৈশাখী মেলা। খোলা আকাশ বা সামান্য ছাউনি দিয়ে পসরা সাজিয়ে বসে দোকানিরা। এসব দোকানে যেসব দ্রব্য পাওয়া যায় তার মধ্যে রয়েছে কুটির শিল্পের বিভিন্ন রকমের দ্রব্য, ছোটদের খেলনাপাতির জিনিস, নানা আকৃতির প্লাস্টিকের পুতুল, বাঁশি, মুখোশ, ঘর সাজানোর জন্যে বিভিন্ন কারুপণ্য, তৈজষপত্র, মাটির পুতুল, ফুল ও ফুলদানী,  কাঠ, বাঁশ, বেত এবং মাটির তৈরি নিত্য ব্যবহার্য দ্রব্যাদি, লোহার তৈরি দা, ছুরি, বঁটি, কোদাল, হামানদিস্তা, তাওয়া, খুন্তি, পিঠা বানানোর রকমারি খোলা আর ‘পুস’ নকশি হাড়ি এবং নানাবিধ পুতুল। হস্তশিল্পজাত যেসব দ্রব্য মেলায় বিক্রয় করা হয় তার মধ্যে রয়েছে পাটের শিকে, দোলনা, থলে, টেবিলম্যাট, বেতের চেয়ার টেবিলসহ নানা ফার্নিচার সামগ্রী। এছাড়া ঐতিহ্যবাহী খাদ্যদ্রব্য, যেমন গজা, মোয়া, তিলের নাড়ু, মাঠা, ছোলা, মুড়ি, বাতাসা, খৈ, জিলাপি, মিষ্টি, বাঙ্গী, তরমুজ, ডাব নারকেলসহ মৌসুমী ফল, নানা প্রকার মাছের শুটকি কেনাবেচা হয়। এর পাশাপাশি থাকে নাগরদোলা, ভ্যারাইটি শো, চরকি, সার্কাস এবং মেলার অন্যান্য অনুষঙ্গ। এ মেলায় বহু লোকের সমাগম ঘটে।


লালদিঘি পার্কঃ লালদিঘির পূর্ব, উত্তর, দক্ষিণ ও মসজিদ সংলগ্ন পশ্চিম পাড়ে অত্যন্ত শোভনভাবে নানারকম গাছ ও ফুলের গাছ দিয়ে সাজানো হয়েছে পার্ক। পার্কের দেওয়াল ঘেঁষে উইলো ও দেবদারুর সারি। ভোর ৬টায় থেকে ৮টা, বিকেল ৩টা থেকে ৭টা পর্যন্ত পার্ক উন্মুক্ত থাকে।লালদিঘির


রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক গুরুত্বঃ লালদিঘির ময়দান জাতীয় রাজনীতির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। লালদিঘির ময়দানে রাজনৈতিক সভা সমাবেশ জাতীয় গুরুত্ব বহন করে থাকে। একে ঘিরেই গড়ে উঠেছে চট্টগ্রামের ব্যবসায় কেন্দ্র। পূর্ব ও উত্তর পাড়ে ব্যাংক, বীমাসহ বিভিন্ন হোটেল গড়ে উঠেছে এ বাণিজ্যিক অঞ্চলে। দিঘির পাড় থেকে বিভিন্ন রুটের বাস চলাচল করে। হাজার হাজার লোকের সমাগম হয় এখানে। সদা কর্মচঞ্চল লালদিঘি এলাকা চট্টগ্রামের রাজনীতি, অর্থনীতি ও সংস্কৃতির এক প্রাণকেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছে। কিভাবে যাওয়া যায়: উক্ত দশর্নীয় স্থানে যাওয়ার জন্য বাস বা অটোরিক্সা ব্যবহার করা যেতে পারে।


তথ্যসুত্রঃ চট্রগ্রাম জেলা তথ্য বাতায়ন ও বাংলা দেশের জেলা-উপজেলার নামকরণ ও ঐতিহ্য (মোহাম্মদ নূরুজ্জামান)

লালদিঘি নামকরণ ইতিহাস ও বিবরণ লালদিঘি নামকরণ ইতিহাস ও বিবরণ Reviewed by sm sohage on April 16, 2019 Rating: 5

চাঁদগাজী ভুঁঞা জামে মসজিদ

April 04, 2019
চাঁদগাজী ফেনীর পুর্ব ভাগে ছাগলনাইয়া ও ত্রিপুরা রাজ্যের সীমান্তে একটি বহুল পরিচিত জনপদ।এ জনপদের একটি ঐতিহ্য রয়েছে। ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া উপজেলা থেকে 3 কিমি উত্তরে চাঁদগাজী বাজার সংলগ্ন মাটিয়া গোথা গ্রামে 1122 হিজরি (1712-13 খ্রিস্টাব্দ) এই ঐতিহাসিক স্থাপিত হয়।

মোঘল আমলের বিশ্ষ্টি ব্যক্তি ছিলেন চাঁদগাজী ভুঞা তাঁর নামানুসারে এ মসজিদের নামকরণ হয় চাঁদগাজী ভুঁঞা জামে মসজিদ।
1987 সালে 01 অক্টোবর প্রকাশিত সরকারী এক গেজেটের মাধ্যমে এ মসজিদ কে সংরক্ষিত প্রত্নসম্পদ হিসেবে বিবেচিত হয়।

বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী মসজিদ হিসেবে চাঁদগাজী ভুঞা মসজিদ ধর্মপ্রাণ মুসলমান ও গবেষকদের দৃষ্টি আকর্ষন করে থাকে।
মধ্যযুগের রীতি অনুযায়ী চুন, সুড়কী ও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ইট দ্বারা তৈরী এ মসজিদের দেয়ালগুলো বেশ চওড়া। মসজিদের ছাদের উপর রয়েছে তিনটি সুদৃশ্য গম্বুজ । মসজিদের সামনে একটি কালো পাথরের নামফলকে এ মসজিদের নির্মানকাল ১১১২ হিজরী সনউল্লিখিত আছে।
চাঁদগাজী ভুঁঞা জামে মসজিদ চাঁদগাজী ভুঁঞা জামে মসজিদ Reviewed by sm sohage on April 04, 2019 Rating: 5

ইদ্রাকপুর দুর্গ

April 01, 2019

নামকরণঃ ইদ্রাকপুর দুর্গ  মুন্সিগঞ্জ সদরে অবস্থিত। মুন্সিগঞ্জ শহরের উপকন্ঠে ইদ্রাকপুর দুর্গ। জলপথে মগ ও পতুর্গীজ জলদস্যুদের আক্রমণ প্রতিহত করার উদ্দেশ্যে সম্ভবত মোঘল সুবাদার মীর জুমলা 1660 খ্রিষ্টাব্দের দিকে ইছামতি নদীর (বর্তমানে শুকিয় যাওয়া) তীরে জলদুর্গটি নির্মান করেন করেন। তৎকালীন মোঘল ফৌজদার ইদ্রাকের নামানুসারে এ দুর্গের নাম হয় ইদ্রাকপুর দুর্গ।


 ইদ্রাকপুর দুর্গ সম্পর্কেঃ শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত খালের পশ্চিমপাড়ে এবং দেওভোগ গ্রামের পূর্বপ্রান্তে দুর্গটির অবস্থান। এই জল-দুর্গটি একসময় ইছামতী ও মেঘনা নদীর সংগমস্থলে সামরিক গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নির্মিত হয়েছিল। তখন দুর্গের নির্মাণস্থলের নাম ছিল ইদ্রাকপুর। এ এলাকায় পরবর্তী সময়ে যে শহরটি গড়ে উঠে একসময় তার নামকরণ হয় মুন্সিগঞ্জ। শহরের উপকণ্ঠে এখনও ইদ্রাকপুর নামে একটি গ্রাম রয়েছে। দুর্গটির চারপাশ এখন মাটিতে ভরাট হয়ে গেছে এবং কোনো কোনো স্থানে মাটির স্তর দুর্গ প্রকারের প্রায় শীর্ষে উঠে গেছে।


মুগল রাজধানী শহর ঢাকা অভিমুখে জলপথে মগ ও পর্তুগিজ জলদস্যুদের অগ্রগতি প্রতিহত করার লক্ষ্যে দুর্গটি নির্মিত হয়। এটি সম্ভবত বাংলার মুগল সুবাহদার মীরজুমলা কর্তৃক ১৬৬০ খ্রিস্টাব্দের দিকে নির্মিত।


ইট নির্মিত চতুর্ভুজাকৃতির এ দুর্গটি উত্তর দক্ষিণে প্রসারিত এবং এর দৈর্ঘ্য ৮৬.৮৭ মিটার ও প্রস্থ ৫৯.৬০ মিটার। দুর্গটিতে রয়েছে দুটি অংশ। এর প্রথম অংশ হলো শীর্ষভাগ খিলানকার ফোকর বিশিষ্ট মারলন শোভিত প্রাচীর বেষ্টিত উন্মুক্ত চত্বর। বেষ্টন প্রাচীরের চারকোণে রয়েছে শীর্ষভাগ মারলন শোভিত চারটি গোলাকার সন্নিহিত বুরুজ। বুরুজের গায়ে রয়েছে বন্দুকে গুলি চালাবার উপযোগী ফোকর। দুর্গের অপেক্ষাকৃত কম পরিসরের অংশে আছে অনুরূপ প্রাচীর বেষ্টিত একটি গোলাকার বৃহদাকৃতির ড্রাম। বৃহত্তর উন্মুক্ত চত্বর থেকে ড্রামের অংশে পৌঁছার জন্য একটি পথ আছে। দুর্গটির সর্বাধিক লক্ষ্যনীয় বৈশিষ্ট্য হলো এর পূর্ব অংশে ৩২.৫ মিটার ব্যাসের একটি গোলাকার উচু বেদী। ৯.১৪ মিটার উঁচু এই বেদীতে উঠার জন্য রয়েছে একটি সিঁড়ি।


দুর্গটির অপর লক্ষ্যণীয় বৈশিষ্ট্য হলো ড্রামের পাদদেশে ভূগর্ভস্থ একটি কুঠরি এবং কুঠরিতে অবতরণের জন্য নির্মিত সিড়ি। লোকশ্রুতি মতে, এ সিড়িটি ছিল একটি গোপন সুরুঙ্গপথের অংশ যার মধ্যে দিয়ে দুর্গে অবস্থানকারীরা কোনো জরুরি অবস্থায় নিরাপদ আশ্রয়স্থলে সরে যেতে পারত। বস্ত্তত এ সিড়িটি একটি গোপন ভূগর্ভস্থ কক্ষে অবতরণের পথ এবং সে কক্ষটি ছিল অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ মজুত রাখার গুদামঘর।


ইদ্রাকপুর দুর্গের প্রধান ফটক উত্তরদিকে। ফটকের উপরের অংশে রয়েছে শীর্ষভাগ খিলানাকার ফোকর বিশিষ্ট ও মারলন শোভিত উঁচু আয়াতাকার বুরুজ। এ অংশটি ছিল প্রহরীদের কক্ষ।


দুর্গের ড্রামের উপরিভাগে পরবর্তী সময়ে নির্মিত ভবন বর্তমানে জেলা প্রশাসকের আবাসস্থল। দুর্গটি এখন কারাগাররূপে ব্যবহূত।


তথ্যসুত্রঃ বাংলাপিডিয়া, বাংলাদেশের জেলা-উপজেলার নামকরণ ও ঐতিহ্য (মোহাম্মদ নূরুজ্জামান)।
ছবিঃ বাংলাদেশ সরকারের ওয়েবসাইট।

ইদ্রাকপুর দুর্গ ইদ্রাকপুর দুর্গ Reviewed by sm sohage on April 01, 2019 Rating: 5
Powered by Blogger.