Results for বিশ্ববিদ্যালয়

খাজা ইউনুস আলী বিশ্ববিদ্যালয় নামকরণ ইতিহাস

May 19, 2019

খাজা ইউনুস আলী বিশ্ববিদ্যালয় (ইংরেজি: Khwaja Yunus Ali University) বাংলাদেশের একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়টি রাজশাহী বিভাগ সিরাজগঞ্জে অবস্থিত। এটি ২০১২ সালে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি অইনের অধীনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং সাহ সুফি খাজা ইউনুস আলীর নামে নামকরণ করা হয়েছিল।


খাজা ইউনুস আলী সম্পর্কেঃ

খাজা ইউনুস আলী বেশি পরিচিত খাজা এনায়েতেপুরী নামে। বিশিষ্ট পীর ও সাধক খাজা মোহাম্মদ ইউনুস আলী জন্ম গ্রহণ করেন ১৮৮৬ সালে সিরাজগঞ্জ জেলার বেলকুচি উপজেলার এনায়েতপুরে পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ), তিনি ছিলেন একজন বিখ্যাত সুফী সাদেক। তার পিতার নাম শাহ সুফী মৌলানা আবদুল করিম। তিনি এলাকায় খাজা পীর বলেই বেশি পরিচিত ছিলেন। নিজ যোগ্যতায় তিনি পীর সাহেবের চব্বিশ লাখ মুরিদানের মধ্যে শীর্ঘস্থান অধিকার করে প্রাপ্তহন তরীকতের সর্বোচ্চ খিলাফত। এই তরিকা নক্সাবন্দ-মুজাদ্দেদী তরিকা নামে পরিচিত। খাজা এনায়েতপুরী ভোগবিলাসী জীবনযাপনের চরম বিরোধী ছিলেন। তিনি ইসলামের মর্মবাণী-তরিকত দর্শন প্রচারের পাশাপাশি সমাজসেবা মুলক কাজেও রেখেছিলেন অনন্য অবদান। খাজা এনায়েতপুরী কে ভক্তবৃন্দ সুলতানুল আউলিয়া এবং চিরস্থায়ী সংস্কারের জন্য আখেরী মুজাদ্দেদে বলে অভিহত করেন।


খাজা ইউনুস আলীর জন্ম ১১ জ্বিলহজ্জ ১৩০৪, (১০ সেপ্টেম্বর ১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দ), তিনি শিক্ষা এবং গবেষণা জন্য ১৭ থেকে ১৮ বছর বয়সে কলকাতার শেখ সৈয়দ ওয়াজেদ আলীকে অনুসরণ করেন। উপমহাদেশের প্রখ্যাত ধর্মীয় নেতা,ওলিয়ে-কামেল সিরাজগঞ্জের হযরত শাহ্ সুফি খাজা ইউনুছ আলী এনায়েতপুরী (রঃ) ইসলাম প্রচারে এক অবিসংবাদিত নেতা। তিনি তার কর্মময় জীবনের মাধ্যমে সুফীবাদকে সমগ্র বাংলা এবং ভারতের আসামে প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন। এজন্য তার দেখানো মানবতার দর্শন ও ইসলাম প্রচারে সাড়া দেশ তথা ভারতের আসামে ১২শ পীর আওলীয়া তাদের খানকা তথা দরবারে ভুমিকা রেখে যাচ্ছেন।


আধ্যাত্বিক সুফী সাধক হযরত খাজা ইউনুছ আলী (রঃ) মুলত ছিলেন ইয়েমেনের বংশধর। তৎকালীন ভারতীয় উপমহাদেশের ইসলাম প্রচারের জন্যই তাদের আগমন ঘঠে। খাজা এনায়েতপুরী (রঃ) এর বাবা শাহ আব্দুল করিম (রঃ) মাতা তামান্না বেগম (রঃ) এর ২ ছেলে এবং ১ মেয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়।


অবিভক্ত ভারত-বাংলার অন্যতম ধর্ম প্রচারক তৎকালীন কোলকাতার মেহেদীবাগ দরবার শরীফের পীর আওলাদে রসুল খাজা ওয়াজেদ আলী (রঃ) এর সংস্পর্শে আসেন খাজা ইউনুছ আলী (রঃ)। তার আদর্শিক কর্মকান্ড এবং মানুষের প্রতি অগাধ ভালবাসা আর নির্লোভ গুণের কারনে খুব স্বল্প সময়ে খাজা ইউনুছ আলী এনায়েতপুরী (রঃ) গুরু খাজা ওয়াজেদ আলী (রঃ) এর তরিকা লাভ করেন। ভোগ বিলাসী জীবনের বিরোধী এই মহামানব মাত্র ১৭ বছর বয়সে ইসলাম ও সুফীবাদের দর্শন ভারতের আসাম সহ সাড়া বাংলায় প্রচারে খেলাফত প্রাপ্ত হন। এরপর নিজ ভুমে ফিরে এসে সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরে খানকা স্থাপন করে শুরু করেন মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর শান্তির তরিকা প্রচার এবং আদর্শের সুফী বাদের বিস্তার কাজ। সেখানেই তিনি বিয়ে করে সংসার জীবন শুরু করেন। জনক হন ৮ কন্যা এবং ৫ পুত্র সন্তানের। পরবর্তীতে সমগ্র বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারতের আসামে সফর করে তিনি ইসলাম ও সুফীবাদ প্রচার কাজ তরান্বিত করেন। তিনি ইসলামের মর্মবাণী-তরিকত দর্শন প্রচারের পাশাপাশি সমাজসেবা মুলক কাজেও রেখেছিলেন অনন্য অবদান।


এরপর তার অনুসারীদের পরামর্শক্রমে এনায়েতপুর দরবারে ১৯১৫ সাল থেকে শুরু করেন ওরশ শরীফ। এতে সাড়া দেশ থেকেই তার ভক্ত মুরিদরা এখানে সমবেত হতে থাকেন। যা ধীরে-ধীরে অগনিত ভক্তদের আগমনে মহাসমাবেশে রুপ নেয়। এরই একপর্যায়ে তার সংস্পর্শে এসে আদর্শিক আলোর পথ প্রচারে ১২শ পীর আওলিয়া নিয়োজিত হন।


এর মধ্যে ফরিদপুরের সদরপুরের প্রখ্যাত আটরশি পীর, চন্দ্রপাড়া পীর, ময়মনসিংহের শম্ভুগঞ্জ পীর, টাঙ্গাইল প্যারাডাইস পাড়া, কুমিল্লার ইসলামাবাদ, মাতুয়াইল, জামালপুরের সাধুরপাড়া মোসলেম নগর, যশোরের ঘুনী দরবার শরীফ, ভারতের আসামের মেহেদীবাগ গণি খলিফার দরবার শরীফ অন্যতম। তারা একইভাবে খাজা ইউনুছ আলী এনায়েতপুরী (রঃ) সুফী বাদের আদর্শ ও ইসলাম প্রচার করছেন। একজন পরিপূর্ণ মানবতাবাদী হিসেবে তিনি সারাটা জীবন অসহায় দুঃখী মানুষদের নিজের হাতে সহযোগীতা করে গেছেন। বাংলা ১৩৫৪ সনে নিজ দরবারে বিনামুল্যে চিকিৎসার জন্য “খাজা দাতব্য চিকিৎসালয়” নামে একটি সেবা প্রতিষ্ঠান তিনি গড়ে তোলেন। বিনা পয়সায় সেবা দিয়ে যাওয়া আধুনিক চিকিৎসার এই প্রতিষ্ঠানটি দেশ-বিদেশ থেকে আগত লাখো জাকের ও এলাকাবাসীর মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলে যা বর্তমানে ৭০ বছর পার করছে।


খাজা ইউনুস আলী শিক্ষার উপর দৃষ্টি ছিলো অনেক বেশী। তিনি মনে করতেন শিক্ষা হলো জীবনের ঐশ্বরিক, আলোকসজ্জা এবং তাঁর শত শত, হাজার হাজার অনুগামীদের তিনি এই উপদেশই দিত।খাজা ইউনুস আলির শিক্ষার প্রতি ছিল উন্নত একটি ত্রিপক্ষীয় শিক্ষণ পদ্ধতি "লেখা" "বক্তৃতা" এবং তার তরিকা দ্বারা প্রভাবিত করত। তিনি তার মুরিদ দের চার সুফী আদেশ দিতেন কাদেরিয়া তরিকা, চিশতিয়া তরিকা, নকশবন্দি তরিকা এবং মোজ্জাদ্দেদই। বিশেষ করে তিনি প্রভাবিত করতেন নকশবন্দি তরিকা এবং মোজ্জাদ্দেদই উপর। তিনি শরিয়তের আলো (The Light of Shariya) এবং (Ganje Asrar) নামে দুটি বই লিখেছেন।


মৃত্যু ও খেলাফত দান
মহান এই মুর্শিদ খাজা এনায়েতপুরী (রঃ) বাংলা ১৩৫৮ সনের ১৮ ফাল্গুন রোববার, ইংরেজী ১৯৫২ সালের ২ মার্চ ইন্তেকাল করলে তার প্রতিষ্ঠিত এনায়েতপুর পাক দরবার শরীফের গদ্দিনশীন পীর হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন বড় ছেলে আলহাজ্ব হযরত খাজা হাশেম উদ্দিন। তাঁর মৃত্যুর পর এ দায়িত্ব আরেক সন্তান হযরত খাজা মোজাম্মেল হকের উপর ন্যাস্ত করা হয়। পরে তিনি অসুস্থ্য হয়ে ইন্তেকাল করলে খাজা ইউনুছ আলী এনায়েতপুরী (রঃ) এর আরেক ছেলে বর্তমান গদ্দিনশীন হুজুরে পাক হযরত খাজা কামাল উদ্দিন নুহু মিয়া দায়িত্ব গ্রহণ করে ইসলামের শান্তির মর্মবাণী প্রচারে বাবার মতই কাজ করছেন।


তথ্যসুত্রঃ উইকিপিডিয়া।
খাজা ইউনুস আলী বিশ্ববিদ্যালয় নামকরণ ইতিহাস খাজা ইউনুস আলী বিশ্ববিদ্যালয় নামকরণ ইতিহাস Reviewed by sm sohage on May 19, 2019 Rating: 5

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এর নামকরণ ইতিহাস

January 04, 2019

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অব্যবহিত প্রাক্তন নাম জগন্নাথ কলেজ, এই নামেই বিংশ শতাব্দীর অধিকাংশ সময় জুড়ে পরিচিত ছিল। এটি ঢাকার একটি ঐতিহ্যবাহী কলেজ। ১৮৫৮ সালে ঢাকা ব্রাহ্ম স্কুল নামে এর প্রতিষ্ঠা হয়। ১৮৭২ সালে এর নাম বদলে জগন্নাথ স্কুল করা হয়। বালিয়াটির জমিদার কিশোরীলাল রায় চৌধুরী তার বাবার নামে জগন্নাথ স্কুল নামকরণ করেন। উল্লেখ্য কিশোরীলাল রায় শিক্ষাবিস্তারে আগ্রহী ছিলেন।


তথ্যসুত্রঃ উইকিপিডিয়া।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এর নামকরণ ইতিহাস জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এর নামকরণ ইতিহাস Reviewed by sm sohage on January 04, 2019 Rating: 5

হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

September 13, 2018
ঠিকানাঃ দিনাজপুর।

হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের একটি বিশ্ববিদ্যালয়।  রংপুর বিভাগের প্রথম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এটি।

নামকরণঃ  তেভাগা আন্দোলন এর জনক ও এ অঞ্চলের জনদরদী কৃষকনেতা হাজী মোহাম্মদ দানেশ এর নামানুসারে এর নামকরণ করা হয়।  এরশাদের শাসনামলে হাজী মোহাম্মদ দানেশ এর  সম্মানে দিনাজপুর কৃষি কলেজের নামকরণ করা হয়েছিল ‘হাজী মোহাম্মদ দানেশ কৃষি মহাবিদ্যালয়’। শেখ হাসিনার শাসনামলে এ মহাবিদ্যালয়কে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত করা হয়। নাম রাখা হয় হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।  তাঁর নামে বোচাগঞ্জের সুলতানপুরে একটি উচ্চ বিদ্যালয়, এতিম খানা  এবং  ঠাকুরগাঁও শহরেও একটি মাদ্রাসা ও এতিমখানা রয়েছে।

হাজী মোহাম্মদ দানেশ সম্পর্কে ঃ

তেভাগা আন্দোলনের অন্যতম মহান নেতা হাজী মোহাম্মদ দানেশ। কৃষকের ভাগ্যের পরিবর্তনে, মেহনতি মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়নে এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদান রেখে যাওয়া এক ত্যাগী মানুষের নাম। বিত্ত-বৈভবে ভাসিয়ে দিতে পারতেন নিজেকে।  আত্মসর্বস্ব ভোগ-বিলাসী জীবনে মত্ত হয়ে বিলাসী ভাবধারায় যেতে পারতেন অন্য জগতে। কিন্তু সে রকম কিছু হননি।  বরং ত্যাগের মহিমায় আত্মাকে গড়ে তোলেন মানুষের জন্য। কৃষক-শ্রমিকের ভাগ্যোন্নয়নে কাজ করেন নিঃস্বার্থভাবে।  কৃষক যেন তার উৎপাদিত ফসলের ন্যায়সঙ্গত ভাগ পান, এজন্য নিরলস সংগ্রাম করেন। জোতদার পরিবারের সন্তান হয়েও তিনি হন কৃষকের নয়নমণি।


১৯০০ সালে দিনাজপুর জেলার বোচাগঞ্জ উপজেলার সুলতানপুর গ্রামের সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন হাজী মোহাম্মদ দানেশ। এ অঞ্চলের একজন ছোট জোতদার মৌলভী সালামত উদ্দীনের জ্যেষ্ঠ পুত্র তিনি। নিজ গ্রামে শৈশবে লেখাপড়ার হাতেখড়ি হলে সেতাবগঞ্জ থেকে প্রবেশিকা, রাজশাহী কলেজ থেকে আই.এ এবং বি.এ পাস করেন। পরবর্তীতে ভারতের উত্তর প্রদেশে আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে এম.এ এবং আইনে বি.এল ডিগ্রি লাভ করেন। ঠাকুরগাঁও আদালতে প্রথম উকিল হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। দিনাজপুর এস.এন কলেজের ইতিহাসের অধ্যাপক হিসেবে শিক্ষকতাও  করেন। এক পর্যায়ে দিনাজপুর জেলা আদালতে আইন ব্যবসা শুরু  করেন। ত্রিশের দশকের প্রথম দিকে যখন জোতদার-জমিদারদের শোষণ, ইংরেজদের দুঃশাসন আর মহানন্দা নদীর করালগ্রাসে মানুষের অর্থনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠছিল, যখন ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন দানা বাঁধছিল, সে রকম একটি সময়ে মাত্র ৩২ বছর বয়সে হজ্জ পালন করেছিলেন মোহাম্মদ দানেশ। সে কারণে তিনি অল্প বয়স থেকে ‘হাজী’ পরিচিতি পেয়েছিলেন। পরবর্তীতে কমিউনিস্ট ধারার রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে কৃষকের ভাগ্যবদলের চেষ্টা করেছিলেন। তাই পরিচিতি পেয়েছিলেন কৃষকের নয়নমণি হিসেবে।



৩২ বছর বয়সে হজ পালন করতে গিয়ে হাজী মোহাম্মদ দানেশ সৌদি পুলিশ দ্বারা ভারতীয়দের নানাভাবে নির্যাতিত হতে দেখেন। ফলে তাঁর মনের ভেতর বিরূপ রেখাপাত তৈরি করে। ব্রিটিশ গোলামির কারণেই ভারতীয়রা সবখানে লাঞ্ছনা ও অবজ্ঞার শিকার হচ্ছে বলে তাঁর বোধ হয়। এ অত্যাচার তাঁর মধ্যে বিদ্রোহের সৃষ্টি করে। মনোজগতে পরিবর্তন আনে। সেই পরিবর্তন থেকে তিনি ব্রিটিশ গোলামির বিরুদ্ধে আন্দোলনে যুক্ত হন। ১৯৩০ সালে কমিউনিস্ট ভাবধারার রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে কখনো প্রকাশ্যে কখনো গোপনে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলেন। ১৯৩৭ সালে কৃষক সমিতিতে যোগ দিয়ে কৃষকের ভাগ্য পরিবর্তনে সচেষ্ট থাকেন। দিনাজপুরে কৃষক সমিতির শাখা গঠন করেন, যার অফিস করা হয় জেলা শহরের মুন্সীপাড়ায়। এ সংগঠনে থেকে তিনি কৃষকদের স্বার্থ আদায়ের লক্ষ্যে তোলাবাটি আন্দোলন ও সুদবিরোধী আন্দোলন গড়ে তুলে বিজয় লাভ করেন। এভাবে বিভিন্ন ইস্যুতে কৃষকের পক্ষে, দরিদ্র মানুষের পক্ষে গড়ে ওঠা আন্দোলনের নেতৃত্বে যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখেন। তাঁর নেতৃত্বে দিনাজপুর জেলায় টোল আদায় বন্ধ ও জমিদারি উচ্ছেদের দাবিতে কৃষক আন্দোলন জোরদার হয়।



ব্রিটিশ শাসনের শেষপর্যায়ে দিনাজপুরসহ উত্তরবঙ্গে ঐতিহাসিক তেভাগা আন্দোলন গড়ে ওঠে কৃষক সমিতি ও কমিউনিস্ট পার্টির ডাকে। দিনাজপুর থেকে শুরু হওয়া তেভাগা আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন হাজী মোহাম্মদ দানেশ ও কমরেড গুরুদাস তালুকদার। এ আন্দোলন ১৯টি জেলায় ছড়িয়ে পড়েছিল এবং একটি বিরাট গণআন্দোলনের রূপ নিয়ে গোটা ভারতবর্ষ কাঁপিয়ে দিয়েছিল। এ আন্দোলন করতে গিয়ে কেবল দিনাজপুরেই ৪০ জন কৃষক জমিদার ও ব্রিটিশ শাসনপুষ্ট বাহিনীর হাতে নিহত হয়েছিলেন। হাজী দানেশের বলিষ্ঠ রাজনীতি ব্রিটিশ শাসকগোষ্ঠীর মসনদ কাঁপিয়ে দিয়েছিল। তাই ইংরেজ সরকার ১৯৩৮ সালে তাকে গ্রেফতার করে। বেশ কিছুদিন তাকে কারাগারে থাকতে হয়।  তেভাগা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে হাজী দানেশ ব্রিটিশ শাসকদের আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়ালে আবারো তাকে গ্রেফতার করে কারাদণ্ড দেয়া হয়। নীলফামারী জেলার ডোমারে ১৯৪২ সালে অনুষ্ঠিত বঙ্গীয় কৃষক সম্মেলনের অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন হাজী দানেশ। সম্মেলনের পর পরই তিনি গ্রেফতার হন এবং দীর্ঘদিন কারাভোগ করেন।



হাজী দানেশ ১৯৪৫ সালে মুসলিম লীগে যোগ দেন। কিন্তু তেভাগা আন্দোলনে নেতৃত্ব দান অব্যাহত রাখার কারণে ১৯৪৬ সালে মুসলিম লীগ থেকে বহিষ্কৃত হন। ওই বছরই তিনি বঙ্গীয় সরকার কর্তৃক গ্রেফতার হন এবং ১৯৪৭ সালে মুক্তিলাভ করেন। ইংরেজ শাসন অবসানের পর হাজী দানেশ নতুন ধারার রাজনীতিতে যুক্ত হন। তিনি ১৯৫২ সালে ‘গণতন্ত্রী দল’ গঠন করেন।  দলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের মনোনয়নে প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হন। কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক ৯২-ক ধারা জারি করে পূর্ববঙ্গে যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভা ভেঙে দেয়ার পর তিনি গ্রেফতার হন এবং ১৯৫৬ সালে মুক্তিলাভ করেন।  ১৯৫৭ সালে গণতন্ত্রী দল বিলোপ করে তিনি মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে গঠিত ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে যোগ দেন এবং দলের সহসভাপতি নির্বাচিত হন। আইয়ুববিরোধী আন্দোলনের কারণে ১৯৬৯ সালে কারারুদ্ধ হন।  আইয়ুবের পতনের পর মুক্তি লাভ করেন ।



বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি লেনিনবাদী কমিউনিস্ট পার্টি গঠন করেন এবং ভারতের মাটিতে থেকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে পুরো সময় কাজ করেন। স্বাধীনতা লাভের পর দলীয় নেতাদের সঙ্গে মতবিরোধ হলে লেনিনবাদী কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেন এবং ১৯৭৩ সালের ডিসেম্বরে জাতীয় গণমুক্তি ইউনিয়ন নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেন এবং দলের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৭৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগে (বাকশাল) যোগ দেন এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নিযুক্ত হন। বাকশাল সরকারের পতনের পর ১৯৭৬ সালে তিনি জাতীয় গণমুক্তি ইউনিয়ন পুনরুজ্জীবিত করেন। কিন্তু ১৯৮০ সালে এ দল বিলোপ করে হাজী দানেশ গণতান্ত্রিক পার্টি নামে একটি নতুন দল গঠন করেন এবং দলের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৮৬ সালে গণতান্ত্রিক পার্টি জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জাতীয় পার্টির সঙ্গে একীভূত করা হয়। হাজী দানেশ জাতীয় পার্টির অঙ্গসংগঠন জাতীয় কৃষক পার্টির প্রধান উপদেষ্টা নিযুক্ত হন।  ১৯৮৬ সালে তিনি দিনাজপুর নির্বাচনী এলাকা থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন।রাজনীতিতে একটি বিরাট কর্মময় জীবনের ইতিহাস রেখে হাজী দানেশ ১৯৮৬ সালের ২৮ জুন ভোর ৪টা ২৫ মিনিটে ঢাকা পিজি হাসপাতালে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।  জীবনের শেষ সময়ে দিনাজপুর জেলা শহরের বালুবাড়ীতে বসবাস করতেন।  এখন দিনাজপুর গোর-এ-শহীদ ময়দানে শুয়ে আছেন অনন্তনিদ্রায়।



হাজী দানেশ রাজনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখার জন্য ১৯৮৩ সালে দৈনিক তিস্তা পদকে ভূষিত হয়েছিলেন।

তথ্য সুত্র ঃ উইকিপিডিয়া ও একুশে টিভি  অনলাইন।

 

 
হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় Reviewed by sm sohage on September 13, 2018 Rating: 5
Powered by Blogger.