Results for মেডিকেল কলেজ

স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ এর নামকরণ ইতিহাস

February 11, 2019

নামকরণঃ স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ বাংলাদেশের একটি সরকারী মেডিকেল কলেজ। এটি বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে পুরাতন ঢাকায় অবস্থিত। এর আগের নাম "মিটফোর্ড হাসপাতাল"। ১৮৫৫ সালের পূর্বে এটি "ওলন্দাজ কুঠি" ছিল যা ব্যবসার উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হত। ১৮৫৮ সালে এই হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত হয়। ঢাকার কালেক্টর এবং পরবর্তীতে ঢাকার তৎকালীন সুপ্রীম কোর্টের বিচারপতি রবার্ট মিটফোর্ড এর রেখে যাওয়া টাকা হতে তার ট্রাস্টীগণ এই হাসপাতাল নির্মাণ করেন। স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ  পুরানো ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের সাথে সংযুক্ত হয়ে ১৮৭৫ সালে ঢাকা মেডিক্যাল স্কুল নামে প্রথম প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮৮৯ সালে ১৬ জন দেশীয় রাজা ও সমাজসেবকের অনুদানে এর প্রধান ভবনটি নির্মিত হয়। ১৯৬২ সালে এটি মেডিক্যাল কলেজে রূপান্তরিত হয়। নবাব পরিবারের অবদানের কথা বিবেচনা করে নবাব স্যার সলিমুল্লাহর নামেই মেডিক্যাল কলেজটির নামকরণ করা হয়।


স্যার সলিমুল্লাহ সম্পর্কে ঃঢাকার নবাব পরিবারে ১৮৭১ সালের ৭ই জুন সলিমুল্লাহ জন্মগ্রহণ করেন। পিতা নবাব আহসান উল্লাহ বৃটিশ, জার্মান, ফার্সী ও উর্দু গৃহশিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে সলিমুল্লাহর শিক্ষা সম্পন্ন করেন। ১৮৯৩ সালে তিনি ডিপুটি ম্যাজিস্ট্রেট পদে নিযুক্ত হয়ে ময়মনসিংহে এবং ১৮১৫ সালে বিহারের মুজাফ্ফরবাদে ও কিছুদিন ত্রিপুরায় দায়িত্ব পালন করে ইস্তাফা দেন। এরপর তিনি ময়মনসিংহে অবস্থান করেন। ১৯০১ সালের ১৬ ডিসেম্বর টেলিগ্রাম মারফত পিতা নবাব আহসানউল্লাহর ইন্তেকালের সংবাদ পেয়ে বিশেষ ট্রেনযোগে ঢাকায় ফিরে আসেন। দু’দিন পর জেষ্ঠ্য পুত্র বিধায় তিনি নবাব পদে অধিষ্ঠিত হন। ১৯০২ সালে বৃটিশ সরকার নবাব সলিমুল্লাহকে ‘কমান্ডার অব দ্যা স্টার অব ইন্ডিয়া (সি.এস.আই) উপাধি দেয়। ১৯০৩ সালের ১লা জানুয়ারী দিল্লীর দরবার হলে ৭ম এডওয়ার্ডের মুকুট পরিধানের রাজকীয় অনুষ্ঠানে সলিমুল্লাহ্কে “নবাব বাহাদুর” খেতাবে ভূষিত করা হয়।
ঢাকা বিভাগীয় কমিশানার স্যাভেজ ঢাকায় একটি ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। এতে ব্যয় ধরা হয় এক লক্ষ ত্রিশ হাজার টাকা। সরকার ত্রিশ হাজার টাকা বরাদ্ধ করে। নবাব সলিমুল্লাহ বাকী এক লক্ষ টাকা ও জমি দান করলে ১৯০২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় “ঢাকা স্কুল অব ইঞ্জিনিয়ারিং। ১৯০৮ সালে নবাব সলিমুল্লাহ আরো অর্থ দান করে পিতার নামে স্কুলটির নামকরণ করেন। “আহসান উল্লাহ স্কুল অব ইঞ্জিনিয়ারিং”। ১৯৪৭ সালের পর স্কুলটি কলেজে উন্নীত হয়। মুসলিম লীগ সরকার ১৯৬২ সালে কলেজটির উন্নতি করে প্রতিষ্ঠা করে ‘পূর্ব-পাকিস্তান প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়’ যা ছিলো তদানীন্তন প্রদেশের প্রথম ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়। স্বাধীনতার পর এটির নাম করণ করা হয়েছে ‘বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি’ (বুয়েট)। নবাব সলিমুল্লাহর দান করা জমিতে বুয়েট প্রতিষ্ঠিত।
এতিম মুসলিম ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার জন্য ১৯০৮ সালে আজিমপুরে ২৮ বিঘা জমিদান করে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ‘নবাব সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিমখানা’। লেখাপড়ার জন্য এতিমখানায় ছেলেদের জন্য একটি এবং মেয়েদের জন্য একটি করে দু’টি স্কুল রয়েছে। শত শত এতিম ছেলে মেয়ের থাকা-খাওয়া, চিকিৎসা, পোশাক-পরিচ্ছদ ও লেখাপড়ার যাবতীয় ব্যয় নবাব সলিমুল্লাহ মৃত্যু পর্যন্ত নিজের পকেট থেকে খরচ করেছেন। বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ এই এতিমখানাটি বর্তমানে বিভিন্ন মানুষের দান করা অর্থে পরিচালিত হচ্ছে।
আধুনিক বা পাশ্চাত্যের শিক্ষা থেকে বিভিন্ন কারণে বঞ্চিত থাকা মুসলমানদের মধ্যে শিক্ষা বিস্তারে নবাব ছিলেন নিবেদিত প্রাণ। যুগোপযোগী শিক্ষার অভাবকেই মুসলমানদের পশ্চাৎপদতার কারণ বলে তিনি বিশ্বাস করতেন। স্যার সৈয়দ আহমেদ উচ্চ শিক্ষার উপর গুরুত্ব দিয়েছেন। কিন্তু নবাব সলিমুল্লাহ প্রাথমিক তথা গণশিক্ষার প্রয়োজনীয়তা গভীরভাবে উপলব্ধি করতেন। ইম্পেরিয়াল লেজিসলোটভ কাউন্সিলে কংগ্রেস নেতা গোপালকৃষ্ণ গোখলে ১৯১১ সালে “বাধ্যতামূলক অবৈতনিক প্রাথমিক শিক্ষা বিল” উত্থাপন করে। এর প্রতি ১৯১২ সালের ৩ রা মার্চ কলিকাতায় অনুষ্ঠিত নিখিল ভারত মুসলিম লীগের ৫ম অধিবেশনের সভাপতির ভাষণে নবাব সলিমুল্লাহ তাঁর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ গোখলের বিলকে সমর্থন করে বক্তব্য রাখেন। বিলটি অনুমোদিত না হওয়ায় তা কার্যকর হয়নি।
তিনি বাস্তবমুখী শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব দিয়ে সমাজের লোকদেরকে শিক্ষাক্ষেত্রে চার শ্রেণিতে বিভক্ত করেন। যথা : ১) অভিজাত বা জমিদার শ্রেণি ২) ব্যবসায়ী ও সরকারী চাকুরী শ্রেণি ৩) কারিগর বা পেশাজীবী শ্রেণি ৪) কৃষক শ্রেণি। এই চার পেশার মানুষদের স্ব স্ব পেশায় যোগ্যতা ও দক্ষতা অর্জনের জন্য ভিন্ন ভিন্ন শিক্ষা পদ্ধতি ও ভিন্ন ভিন্ন স্কুল কলেজ প্রতিষ্ঠার পক্ষে অভিমত ব্যক্ত করেন। সেই সঙ্গে ভিন্ন ভিন্ন পেশার জন্য স্বতন্ত্র পুস্তকাদি রচনা ও পাঠ্যসূচী প্রণয়নের পরামর্শ দেন। পরবর্তীতে ভারত, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ তাঁর এই পরিকল্পনা অনুসরণ করছে। শিক্ষা পরিবেশে থেকে শিক্ষার্থীরা যেন উন্নত চরিত্র গঠনের সুযোগ পায় সেজন্য আলীগড় কলেজ হোস্টেলের মতো ঢাকায় একটি মুসলিম ছাত্রবাস নির্মাণের জন্য ১,৮৬,০০০ টাকা দান করেন। এর পূর্বে বঙ্গে ছাত্রবাস নির্মাণ করার চিন্তাও কেউ করতে পারেননি। তাছাড়া ঢাকার বিভিন্ন স্কুল, মাদ্রসা ও মুসলিম বোর্ডিং এর জন্য ১৯০৫ সালেই তিনি লক্ষাধিক টাকা দান করেন।
১৯১২ সালের ৩১ জানুয়ারী লর্ড হার্ডিঞ্জ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবী মেনে নেয়ার পূর্ব পর্যন্ত নবাব সলিমুল্লাহ প্রস্তাবিত আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য নিরলস ভাবে কাজ করেন। আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসতে ভারতের বিভিন্ন নবাব ও মুসলিম জমিদারসহ বিশিষ্ঠ মুসলিম নেতৃবৃন্দের সঙ্গে নবাব সলিমুল্লাহ যোগাযোগ রক্ষা করতেন। ১৯১১ সালের ১৫ ও ১৬ মার্চ নবাব সলিমুল্লাহর সভাপতিত্বে তার বাসভবন আহসান মঞ্জিলে অনুষ্ঠিত প্রাদেশিক মুসলিম লীগের অধিবেশনে প্রস্তাবিত আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় জন্য চাঁদা সংগ্রহ করতে নবাব সলিমুল্লাহকে প্রেসিডেন্ট এবং রেভিনিউ বোর্ডের জুনিয়ার সচিব মুহীবুদ্দিনকে সেক্রেটারি করে ‘পূর্ববঙ্গ আসাম প্রাদেশিক চাঁদা সংগ্রহ কমিটি’ গঠন করা হয়। এই কমিটির অন্যতম সদস্য শওকত আলী ও ধনবাড়ীর জমিদার সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরীর সহযোগিতায় নবাব সলিমুল্লাহ ১৯১১ সালের আগস্ট মাসের মধ্যে ১,৫০,০০০ টাকা চাঁদা সংগ্রহ করে আলীগড়ে প্রেরণ করেন। স্যার সৈয়দ আহমেদ (১৮১৭-১৮৯৮) ১৮৭৫ সালে আলীগড় স্কুল এবং ১৮৭৭ সালে আলীগড় কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। তার মৃত্যুর ২২ বছর পর বাংলাসহ ভারতের বিশিষ্ট মুসলিম নেতৃবৃন্দের ধারাবাহিক সহযোগিতায় ১৯২০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়। একবছর পর ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পেছনে মুসলিম সমাজে শিক্ষা বিস্তারের আপোষহীন নেতা নবাব সলিমুল্লাহর শ্রম, সহযোগিতা ও সাহায্য ইতিহাস স্বীকৃত।
বঙ্গভঙ্গ রহিত হবার পর নবাব সলিমুল্লাহ ও নবাব সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরীর নেতৃত্বে ১৯ সদস্যের একটি মুসলিম প্রতিনিধি দল ১৯১২ সালের ৩১ জানুয়ারী ঢাকা সফররত ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। আলোচনার সময় নবাব সলিমুল্লাহ তাঁর পুরনো দাবী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সঙ্গে মুসলিম শিক্ষা ব্যবস্থা তদারকীর জন্য মুসলিম শিক্ষা কর্মকর্তা এবং আনুপাতিক হারে মুসলিম শিক্ষক নিয়োগের দাবী জানান। নবাবের এই দুইটি দাবী ভাইসরয় মেনে নেন এবং সংখ্যানুপাতে মুসলিম শিক্ষা অফিসার এবং সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে ৩৩ শতাংশ মুসলিম শিক্ষক নিয়োগের নির্দেশ দেন। কিন্তু প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকায় অর্ধেক পদও পূরণ হয়নি।
স্কুলগুলোতে মুসলিম শিক্ষক নিয়োগের ব্যাপারে নবাবের যুক্তি ছিলো যে, অমুসলিম শিক্ষকদের সংস্কৃত ঘেষা বাংলা ভাষা মুসলিম শিক্ষার্থীদের জন্য কিছুটা অন্তরায় সৃষ্টি করে। এ সম্পর্কে ১৯০৮ সালে পাঞ্জাবের অমৃতসরে অনুষ্ঠিত সর্বভারতীয় মুসলিম শিক্ষা সম্মেলনের ২২তম অধিবেশনে সভাপতির ভাষণে নবাব সলিমুল্লাহ বলেনঃ “বাংলাদেশে শহরের ছেলে পুলেরা সাধারণ উর্দুতেই কথা বলে, আর শহরতলী বা গ্রামে ব্যবহৃত হয় মুসলিম বাংলা ভাষা যা হিন্দুদের ব্যবহৃত বাংলা ভাষা থেকে স্বতন্ত্র। তাই সরকারী স্কুলগুলোতে মুসলিম শিক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে”। ৫৫২ বছরের মুসলিম শাসনের সময় মুসলিম সুলতানদের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলা সাহিত্য দুটি সমান্তরাল পথে বিকশিত হয়েছে। এর একটি হচ্ছে আরবী ও ফার্সী শব্দাবলী নির্ভর ‘মুসলিম বাংলা সাহিত্য’ এবং অপরটি সংস্কৃত, পালি ও প্রাকৃত শব্দাবলী প্রভাবিত ‘হিন্দু বাংলা সাহিত্য’। এই দু’টি ধারা আজও অব্যাহত রয়েছে।
১৯০৪ সালের ১১ জানুয়ারী আহসান মঞ্জিলে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় নবাব সলিমুল্লাহর দেয়া আসাম প্রদেশ, ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগ এবং দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি ও কুচবিহার নিয়ে নতুন প্রদেশ গঠনের প্রস্তাবটি মেনে নিয়ে বৃটিশ সরকার ১৯০৫ সালের ১৬ অক্টোবর গঠন করে ‘পূর্ব বাংলা ও আসাম প্রদেশ’। নতুন প্রদেশের অবিসংবাদী নেতা হিসাবে নবাব সলিমুল্লাহ শিক্ষা বিস্তারকে প্রাধান্য দেন। ১৯০৫ সালেই বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিপুল অর্থ দান করেন। শিক্ষা সম্মেলন, শিক্ষা সমিতি, সর্ব ভারতীয় ও প্রদেশিক মুসলিম লীগ গঠনের জন্য বিপুল অর্থ ব্যয় করে ১৯১৩ সালে তিনি ঋণগ্রস্থ হয়ে পড়েন। বৃটিশ সরকার তার জমিদারীর দায়িত্ব গ্রহন করে ‘কোর্টস অব ওয়ার্ড’ গঠন করে এবং জমিদারীর আয় থেকে তাকে মাসোহারার ব্যবস্থা করে। বাংলা তথা বৃটিশ ভারতের মুসলমানদের শিক্ষা বিস্তারের উন্নয়নের ক্ষেত্রে ও তাদের রাজনৈতিক অধিকার আদায়ের জন্য অকাতরে অর্থ ব্যয় করে নবাব সলিমুল্লাহ নিঃস্ব হয়ে পড়েন।
বৃটিশ ভারতের অধিকার বঞ্চিত মুসলমানদের জন্য তার সবচেয়ে বড় অবদান ‘নিখিল ভারত মুসলিম লীগ’। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে শত বছরের শোষনের ফলে তালানীতে পৌঁছে যাওয়া ভারতীয় মুসলমানদের ঔক্যবদ্ধ করেছে মুসলিম লীগ। ১৯০৬ সালের ৩০ ডিসেম্বর ঢাকার শাহবাগের বাগান বাড়ীতে গঠিত হবার পর থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত এই দলের পতাকা নিয়ে মুসলিম স্বার্থ রক্ষায় রাজনীতি করেছেনঃ মহামান্য আগাখান (১৮৭৭-১৯৫৭), কংগ্রেসের সাবেক নেতা কায়েদে আজম মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ (১৮৭৬-১৯৪৮), নবাবজাদা লিয়াকতম আলী খান (১৮৯৫-১৯৫১), শের-এ-বাংলা একে ফজলুল হক (১৮৭৩-১৯৬২), হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী (১৮৯২-১৯৬৩), খাজা নাজিমউদ্দিন (১৮৯৪-১৯৬৪), মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাষানী (১৮৮০-১৯৭৬), পন্ডিত আবুল হাশিম (১৯০৫-১৯৭৪), ফজলুল কাদের চৌধুরী (১৯১৯-১৯৭৩), খান এ সবুর (১৯০৮-১৯৮২), শেখ মুজিবর রহমান (১৯২০-১৯৭৫) প্রমুখ নেতৃবৃন্দ। উপমহাদেশে মুসলিম রাজনীতিবিদ সৃষ্টির পেছনে রয়েছে নবাব সলিমুল্লাহ ও তার গঠিত মুসলিম লীগের ঐতিহাসিক অবদান।
কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নেতৃত্বে পূর্ববঙ্গের কলকাতা প্রবাসী জমিদারগণের এবং ভারতীয় কংগ্রেসের প্রচ- বিরোধীতা ও মাষ্টারদা সূর্য সেনের নেতৃত্বে পরিচালিত সন্ত্রাসবাদী আন্দোলনের ফলে বৃটিশ স¤্রাট পঞ্চম জর্জ ১৯১১ সালের ১২ ডিসেম্বর দিল্লির দরবার হলে বঙ্গভঙ্গ রহিত করেন। এতে বাংলার মুসলমানরা আশাহত হয়ে পড়ে, আর উল্লসিত হয় বাংলার বর্ণবাদী হিন্দু নেতারা। ১৯১২ সালের ৩১ জানুয়ারী নবাব সলিমুল্লাহর প্রস্তাব মেনে ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঘোষনা করেন। ‘পূর্ববঙ্গের চাষা-ভূষা মুসলমানদের’ উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ দেয়ার স্বার্থে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য নবাব সলিমুল্লাহ দুইশত বিঘার বেশী জমি দান করেন। তার দান করা জমিতে প্রতিষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নবাব সলিমুল্লাহর জন্ম বা মৃত্যুবার্ষিকী কখনো পালন করা হয় না। অকৃতজ্ঞতা আর কাকে বলে।
বঙ্গভব্দ রহিত হবার পর থেকেই নবাব সলিমুল্লাহ স্বপ্নভঙ্গের ব্যাধিতে ভুগতে থাকেন। এ.কে.ফজলুল হককে বঙ্গীয় মুসলিম লীগের নেতৃত্বে অধিষ্ঠিত করে তিনি সক্রিয় রাজনীতি থেকে অবসর নেন। ১৯১৫ সালের ১৬ জানুয়ারী কলিকাতা থেকে তাঁর ঢাকা ফেরার কথা ছিলো।
তিনি ফিরলেন, তবে জীবিতাবস্থায় নয়। ১৬ জানুয়ারী রাত ২-৩০ মিনিটে তাঁর কলিকাতার চোরঙ্গী রোডস্থ ৫৩ নং বাড়ীতে ইন্তেকাল করেন। ১৬ জানুয়ারী বিকাল চারটায় কলিকাতায় আলিয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন ওয়েলসলী স্কোয়ার পার্কে নামাজে জানাযা শেষে ১৭ জানুয়ারী নবাব সলিমুল্লাহর লাশ ঢাকায় আনা হয়। ঢাকায় দু’টি জানাযা শেষে নবাবকে দাফন করা হয় বেগম বাজার পারিবারিক গোরস্থানে। নবাবের মৃত্যৃ আজো রহস্যে ঘেরা।


তথ্যসুত্রঃ ‍উইকিপিডিয়া, বাংলাপিডিয়া।

স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ এর নামকরণ ইতিহাস স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ এর নামকরণ ইতিহাস Reviewed by sm sohage on February 11, 2019 Rating: 5
Powered by Blogger.