Results for দিন ও মাস

বাংলা সাত বার নামকরণ

July 22, 2018

বাংলা বারোমাস আর বাংলা সাতবারের নামকরণগুলো হয়েছে গ্রহ, উপগ্রহ এবং নক্ষত্রের নামানুসারে।  বাংলা সাত বারের নামকরণ হয়েছে নক্ষত্র, গ্রহ ও উপগ্রহের নামে।  যেমন বুধ গ্রহ থেকে হয়েছে বাংলা বুধবার। শনি গ্রহ থেকে বাংলা শনিবার।  মঙ্গল গ্রহ থেকে বাংলা মঙ্গলবার।  শুক্র গ্রহ থেকে বাংলা শুক্রবার এবং বৃহ¯পতি গ্রহ থেকে বাংলা বৃহস্পতিতিবার নামকরণ হয়েছে। আর নক্ষত্র থেকে বাংলা রবিবার এর নামকরণ এবং উপগ্রহ থেকে বাংলা সোমবারের নামকরণ হয়েছে।  কারণ সূর্য একটি নক্ষত্র।  আর সূর্য নামক নক্ষত্রের প্রতিশব্দ হলো রবি। সেই রবি নক্ষত্র থেকে বাংলা রবিবারের নামকরণ হয়েছে। তারপর চন্দ্র পৃথিবীর একটি উপগ্রহ।  আর চন্দ্রের প্রতিশব্দ হলো সোম। এই সোম উপগ্রহ থেকে বাংলা সোমবারের নামকরণ করা হয়েছে। ভিন্নমতে, রবিবার- রবি বা সূর্য দেবতার নামানুসারে নামকরণ হয়েছে রবিবার। আর সোমবার- সোম বা শিব দেবতার নামানুসারে নামকরণ হয়েছে সোমবার।  


তথ্যসুত্র:  দৈনিক সংগ্রাম।

বাংলা সাত বার নামকরণ বাংলা সাত বার নামকরণ Reviewed by sm sohage on July 22, 2018 Rating: 5

ইংরেজি বার মাসের নামকরণ

July 02, 2018

 ইংরেজি বর্ষ পালন করা হয় গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী।  গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের আগে ছিল জুলিয়ান ক্যালেন্ডারের প্রচলন। জুলিয়ান ক্যালেন্ডারেরও আগে রোমানরা গ্রিক পঞ্জিকা অনুযায়ী বছর ধরতো ৩০৪ দিনে। যাকে ১০ মাসে ভাগ করা হয়েছিল। জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারির জন্ম তখনো হয়নি। মার্চ ছিল বছরের প্রথম মাস। এক সময় রাজা নুমা পম্পিলিয়াস দেখলেন ৩০৪ দিন হিসেবে বছর করলে প্রকৃতির সঙ্গে মিলছে না। খ্রিস্টপূর্ব ৭৯৩ অব্দে তিনি বছরের সাথে যোগ করলেন আরো ৬০ দিন। বছরের দিন বৃদ্ধি পেল ঠিকই সঙ্গে সমস্যাও বৃদ্ধি পেল। ঋতুর চেয়ে সময় এগিয়ে আছে ৩ মাস। তখনই জুলিয়াস সিজার ঢেলে সাজালেন বছরকে।  নতুন দুটি মাস জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিকে নিয়ে এলেন বছরের প্রথমদিকে।

এবার দেখা যাক কিভাবে এলো এই ইংরেজি মাসের নাম—

জানুয়ারি : রোমে ‘জানুস’ নামক এক দেবতা ছিল। রোমবাসী তাকে সূচনার দেবতা বলে মানতো। কোনোকিছু করার আগে তারা এই দেবতার নাম স্মরণ করতো। তাই বছরের প্রথম নামটিও তার নামে রাখা হয়। আরেকটি তথ্য মতে, ‘জানুস’-এর ছিল দুটি মুখ। একটি সামনে, অন্যটি পেছনে। একটি মুখ তাকিয়ে আছে অনাগত ভবিষ্যতের দিকে, অন্যটি বিদায়ী অতীত পানে। আর তাই তার সাথে মিল রেখে জানুয়ারিকে বছরের প্রথম মাস করা হয়।

 ফেব্রুয়ারি: যিশুখ্রিস্টের জন্মের ৪৫০ বছর আগে দ্বিতীয় মাস হিসেবে ফেব্রুয়ারির প্রচলন ছিল। সেকালে রোমানরা ‘ফেব্রুয়া’ নামে চিত্তশুদ্ধির উত্সব পালন করতো। ‘ফেব্রুয়া’ মানে পবিত্র। রোমানরা তাই এই মাসটিকে পবিত্র মনে করে।

 মার্চ: রোমান যুদ্ধ দেবতা ‘মারস’-এর নামানুসারে তারা মার্চ মাসের নামকরণ করেন।
  
এপ্রিল: বসন্তের দ্বার খুলে দেওয়াই এপ্রিলের কাজ। তাই কেউ কেউ ধারণা করেন ল্যাটিন শব্দ ‘এপিরিবি’ (যার অর্থ খুলে দেওয়া) থেকে এপ্রিল এসেছে।

মে: রোমানদের আলোকে দেবী ‘মেইয়ার’-এর নামানুসারে মাসটির নাম রাখা হয় মে।

জুন :রোমানদের নারী, চাঁদ ও শিকারের দেবী ছিলেন ‘জুনো’। আর তার নামেই জুনের নামকরণ করেন তারা।

জুলাই: জুলিয়াস সিজারের নামানুসারে জুলাই মাসের নামকরণ। মজার ব্যাপার হচ্ছে, বছরের প্রথমে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিকে স্থান দিয়ে তিনি নিজেই নিজেকে দূরে সরিয়ে দেন। জুলাই মাসের নাম আগে ছিল ‘কুইন্টিলিস’ এর অর্থ পঞ্চম। জুলিয়াস সিজার যখন রোমের সম্রাট হন তখন তিনি নিজের নামটিকে বিশেষভাবে চিহ্নিত করার জন্যই কুইন্টিলিস-এর পরিবর্তে নাম দিলেন নিজের নাম জুলিয়াস। এতেও কিন্তু জুলিয়াস ক্ষান্ত হলেন না, আরো গৌরব বাড়ানোর জন্য ৩০ দিনের এ মাসকে করলেন ৩১ দিন। কিন্তু বছর তো আর ৩৬৫ দিন থেকে বেড়ে ৩৬৬ দিন হতে পারে না। তাই রোমান পণ্ডিতরা ফেব্রুয়ারি মাসকে ৩০ দিন থেকে কমিয়ে ২৯ দিন করতে বাধ্য হলেন।
  
আগস্ট:  আগস্ট এর পুর্ব নাম ছিল ‘সিক্সিলিস’ ষষ্ঠ।  পরে জুলিয়াস সিজারের পর রোমের সম্রাট হন তারই ভাইয়ের ছেলে অগাস্টাস সিজার।  তারই নামানুসারে এই মাসটির নামকরণ করা হয় ‘আগস্ট’।

সেপ্টেম্বর: সেপ্টেম্বর শব্দের শাব্দিক অর্থ সপ্তম। কিন্তু সিজারের বর্ষ পরিবর্তনের পর তা এসে দাঁড়ায় নবম মাসে। তারপর এটা কেউ পরিবর্তন করেনি।

অক্টোবর: ‘অক্টোবর’-এর শাব্দিক অর্থ অষ্টম। সেই মতে এটা অষ্টম মাস হওয়ার কথাঅ কিন্তু সেই অষ্টম মাস আমাদের ক্যালেন্ডারের এখন স্থান পেয়েছে দশম মাসে।

নভেম্বর : ‘নভেম’ শব্দের অর্থ নয়। সেই অর্থানুযায়ী তখন নভেম্বর ছিল নবম মাস। জুলিয়াস সিজারের কারণে আজ নভেম্বরের স্থান এগারোতে।

ডিসেম্বর: ল্যাটিন শব্দ ‘ডিসেম’ অর্থ দশম। সিজারের বর্ষ পরিবর্তনের আগে অর্থানুযায়ী এটি ছিল দশম মাস।  কিন্তু আজ আমাদের কাছে এ মাসের অবস্থান ক্যালেন্ডারের শেষপ্রান্তে।


তথ্যসুত্র: দৈনিক ইত্তেফাক

ইংরেজি বার মাসের নামকরণ ইংরেজি বার মাসের নামকরণ Reviewed by sm sohage on July 02, 2018 Rating: 5

বাংলা বার মাসের নামকরণ

July 01, 2018
   বাংলা সনের জন্ম ইতিহাসের সঙ্গে মোঘল সম্রাট আকবরের নাম জড়িয়ে আছে। বলা হয়, সম্রাট আকবরের সিংহাসন আরোহনের বছরকে (বা বলা হয় দিনকে) স্মরণীয় করে রাখতে সম্রাটের রাজ-জ্যোতিষ আমীর ফতেহ উল্লাহ সিরাজী যে ‘ফসলী’ সন প্রবর্তন করেন, সেটাই বাংলা সন হিসেবে পরিচিত। ‘বঙ্গাব্দ’ বর্তমানে কেবল বাংলাদেশেই প্রচলিত। মূলতঃ বাংলার জন্য উদ্ভাবিত বলেই এই সনকে বাংলা সন বলা হয়।

  বাংলা সনের দিনের শুরু ও শেষ হয় সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের মধ্যদিয়ে। নিজ অক্ষরেখায় পৃথিবী ঘুরতে যে সময় লাগে তাকে বলা হয় দিন। সাতদিনে হয় এক সপ্তাহ। আর ত্রিশ দিনে একমাস। চাঁদও পৃথিবীর চারিদিকে ঘুরে। পৃথিবীর চারিদিকে ঘুরে আসতে চাঁদের সময় লাগে এক মাস। যা চন্দ্রমাস নামে পরিচিত। যে সন চাঁদের হিসেবে গণনা করা হয় তাকে বলা হয় চন্দ্র সন এবং যে সন সূর্যের হিসেবে গণনা করা হয় তাকে বলে সৌরসন। এই সৌরসনের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে তখনকার প্রচলিত হিজরী সনকে ‘ফসলি সন’ হিসেবে চালু করার মাধ্যমে বর্তমান বাংলা সন বা বঙ্গাব্দের জন্ম হয়। বাংলা সন হিজরী সনেরই সৌররূপ। যা প্রবর্তন করেন মোঘল সম্রাট আকবর। বাংলাদেশের ও বাংলা ভাষার অনুসারী সকল মানুষেরা সাতদিনকে সাতবার বলে। এই সাতবার ও বারোমাসের নামকরণ প্রসঙ্গে আসা যাক।

বাংলা বারোমাস আর বাংলা সাতবারের নামকরণগুলো হয়েছে গ্রহ, উপগ্রহ এবং নক্ষত্রের নামানুসারে। বাংলা সাত বারের নামকরণ হয়েছে নক্ষত্র, গ্রহ ও উপগ্রহের নামে। যেমন বুধ গ্রহ থেকে হয়েছে বাংলা বুধবার। শনি গ্রহ থেকে বাংলা শনিবার। মঙ্গল গ্রহ থেকে বাংলা মঙ্গলবার। শুক্র গ্রহ থেকে বাংলা শুক্রবার এবং বৃহ¯পতি গ্রহ থেকে বাংলা বৃহ¯্পতিবার নামকরণ হয়েছে।

আর নক্ষত্র থেকে বাংলা রবিবার এর নামকরণ এবং উপগ্রহ থেকে বাংলা সোমবারের নামকরণ হয়েছে। কারণ সূর্য একটি নক্ষত্র। আর সূর্য নামক নক্ষত্রের প্রতিশব্দ হলো রবি। সেই রবি নক্ষত্র থেকে বাংলা রবিবারের নামকরণ হয়েছে। তারপর চন্দ্র পৃথিবীর একটি উপগ্রহ। আর চন্দ্রের প্রতিশব্দ হলো সোম। এই সোম উপগ্রহ থেকে বাংলা সোমবারের নামকরণ করা হয়েছে। ভিন্নমতে, রবিবার- রবি বা সূর্য দেবতার নামানুসারে নামকরণ হয়েছে রবিবার। আর সোমবার- সোম বা শিব দেবতার নামানুসারে নামকরণ হয়েছে সোমবার।

প্রাচীনকালে উপমহাদেশে পঞ্জিকা ‘পঞ্চাঙ্গ’ নামেও পরিচিত ছিল। কারণ এতে ছিল পাঁচটি অঙ্গ। যেমন- বার, তিথি, নক্ষত্র, যোগ ও করণ। এই পঞ্জিকা গণনা পদ্ধতি রচিত হয়েছিল আনুমানিক ১৫০০ পূর্বাব্দে। তখন বছরকে ভাগ করা হয়েছিল বারোমাসে। সেই মাসগুলোর নাম ছিল নিম্নরূপঃ (১) তপঃ (২) তপস্যা (৩) মধু (৪) মাধব (৫) শুক্স (৬) শুচি (৭) নভস (৮) নভস্য (৯) ইষ (১০) উর্জ (১১) সহস ও (১২) সহস্য। পরে মহাশূন্যের নক্ষত্রের নামানুসারে বাংলা বারোমাসের নামকরণ হয়েছে।

রাশিচক্রে নক্ষত্র সংস্থাপন চিত্র থেকে সহজে বুঝা যায় যে, প্রাচীনকালে কীভাবে চন্দ্র মাসের নাম করা হতো। সাধারণত পূর্ণিমার পরদিন (প্রতিপদ) থেকে চান্দ্র মাসের সূচনা হত, যে নক্ষত্র পূর্ণিমাস্ত হয় তার নামানুসারে মাসের নাম নির্ধারিত হত। যেমন- বিশাখা নক্ষত্রে পূর্ণিমাস্ত হওয়ার পর যে মাস শুরু তার নাম বৈশাখ। কৃত্তিকা নক্ষত্রে পূর্ণিমাস্ত হলে নতুন মাসের নাম হয় কার্তিক ইত্যাদি। আকাশে চন্দ্রের গতির কারণে প্রতিভাত হয় ‘চন্দ্র-দশা’ এবং যা থেকে আমরা ধারণা করি মাসের। বাংলা সালটির সঙ্গে জ্যোতিষী গণনার সম্পর্ক ছিলো বলে তার প্রত্যেকটি মাসের নামই এক একটি নক্ষত্রের নামে রাখা হয়েছে। যে নক্ষত্রে পূর্ণিমার অস্ত  হয়, সেই নক্ষত্রের নামানুসারেই প্রতিটি মাসের নামকরণ করা হয়েছে।

যে চন্দ্র মাসে সাধারণত মৃগশিরা নক্ষত্রের পূর্ণিমার অস্ত হয়, একে মার্গ-শীর্ষ বলে। এই নক্ষত্রযুক্ত মাসটিই আমাদের অগ্রহায়ণ মাস। কিন্তু নক্ষত্রটির নামের সঙ্গে এই মাসটির নামের কোনো সাদৃশ্যই নেই। ফসলি মাস হিসেবে একে অগ্রগণ্য করতে যেয়েই তার নাম হয়েছে অগ্রহায়ণ এবং মূল নামের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্কই নেই। কোনো কোনো ভারতীয় ভাষায় তার মূল নামটির ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায়। বর্তমান পাকিস্তানের প্রদেশগুলোতে এই মাসটির নাম মাগর এবং গুজরাটি ও কাচ্চি ভাষায় একে বলা হয় মাক্সার। এই নামটিই সংশ্লিষ্ট নক্ষত্রের সঙ্গে সম্পর্কিত নামের অপভ্রংশ। বাংলা অগ্রহায়ণ মাসটির নাম হিন্দ, মহারাষ্ট্র ও উড়িয়া ভাষায় আগাহান। বাংলাদেশের কথ্য ভাষায় আগন বলে। একই উৎসজাত এ নামটি সম্ভবত একই কারণে বিশেষ বিশেষ অঞ্চলে গৃহীত হয়েছিল।

নববর্ষ অনুষ্ঠানের প্রাচীন ধারার দিকে অনুসন্ধানী চোখে তাকালে এটা দেখা যাবে যে, আজকাল বৈশাখ মাসে নববর্ষের সূচনা ধরা হলেও প্রাচীনকালে এদেশে নববর্ষ শুরু হতো অগ্রহায়ণ মাসে। অগ্রহায়ণ নামটির অর্থের মধ্যেই বছরের প্রথম মাসের ইঙ্গিত রয়েছে। হায়ণ-এর একটি অর্থ হলো বছর। এদিক থেকে অগ্রহায়ণ শব্দের অন্য একটি অর্থ হলো সেরা শস্য বা ধান। অগ্রহায়ণ মাসের নাম এসেছে ‘অগ্রহায়ণী’ নক্ষত্রের নাম থেকে। প্রচলিত লোক বিশ্বাস হলো, অগ্রহায়ণী নক্ষত্রের  উদয়ে ধান পাকে। বাঙালির জীবনে নববর্ষ এবং তাকে উপলক্ষ করে উৎসবের সূচনা হয়েছে ফসল উৎপাদনের সূত্র ধরে। আর প্রথমে সে উৎসব পালিত হতো অগ্রহায়ণে, বৈশাখে নয়।

বাংলা সনের বৈশাখ থেকে চৈত্র পর্যন্ত বারোমাসের হিসাব পাওয়া যায়। বাংলা সনের প্রথম মাস বৈশাখ। বিশাখা নক্ষত্রের নামানুসারে বৈশাখ মাসের নামকরণ হয়েছে। বারোমাসে এক বছর হয়- এ অর্থে বার সংখ্যাটি এখানে সম্পূরক বাচক। বারোমাসের ধারণা বাংলা বারোমাসি গানেও নিহিত আছে। কোনো বারোমাসীতে বৈশাখ, কোনোটিতে অগ্রহায়ণ, কোনোটিতে মাঘ মাসকে বছরের প্রথম মাস গণনা করে এরূপ রচিত হয়েছে। মাসে মাসে প্রকৃতি কী রূপ ধারণ করে, মানুষের জীবনে তার কী প্রভাব পড়ে, নর-নারী কীরূপ আচরণ করে ইত্যাদির বিবরণ থাকে বারোমাসিতে। সম্রাট আকবরের রাজত্বকালে এদেশে বাংলা সন, মাস, বার ইত্যাদি রীতিবদ্ধ গণনা প্রবর্তিত হয়। সম্ভবত তখন থেকে বছরের প্রথম মাস হিসেবে বৈশাখের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়। নতুবা আগেও বাংলা মাসের প্রচলন ছিল।

ড. নীহাররঞ্জন রায়ের মতে বাঙালির নববর্ষের উৎসব ছিল ‘নবান্ন’। তাঁর কথায় বৈদিক যুগে বছরের প্রথম মাস হিসেবে ধার্য্য হয় অগ্রহায়ণ। অগ্রহায়ণ মাসেই নবান্ন হতো। মুর্শিদকুলি খাঁ যখন বাংলায় শাসক তখন খাজনা আদায়ের জন্য ধার্য হয় বৈশাখ মাস।

সুতরাং বলা যায় প্রাচীনকাল থেকেই বাংলা মাস গণনার নিয়ম পদ্ধতি চালু রয়েছে। বৈশাখ মাসই যে বর্ষ গণনার প্রথম মাস ছিল তার বহু প্রমাণ বাংলা সাহিত্যে বিদ্যমান। কবি মুকুন্দরামের মঙ্গলকাব্যে তার প্রমাণ মিলে।

গবেষকদের মতে বাংলা সনের মাসের নামগুলো ষোড়শ মহাজনপদের সময় চিহ্নিত মহাকালের নক্ষত্রম-লীর নাম থেকে নেয়া হয়েছে। এক সময় বাংলা ১৬টি মহাজনপদে বিভক্ত ছিল। এ মহাজনপদের প-িত ও জ্যোতির্বিদগণ গ্রহ, নক্ষত্র, তিথি ইত্যাদি পর্যবেক্ষণ ও অনুসন্ধান করে কিছু নক্ষত্রের নামানুসারে বাংলা সনের বাংলা বারোমাসের নামকরণ করেছিলেন। যেমন- বিশাখা নক্ষত্রের নামে হয়েছে বৈশাখ মাস। জ্যৈষ্ঠা নক্ষত্রের নামে হয়েছে জ্যৈষ্ঠ মাস। পূর্বাষাঢ়া বা আষাঢ়া নক্ষত্রের নামে নামকরণ হয়েছে বাংলা আষাঢ় মাসের। শ্রাবণা বা শ্রবণ নক্ষত্রের নামে বাংলা শ্রাবণ মাসের নামকরণ হয়। পূর্ব ভদ্রপদ বা ভাদ্রপদা নক্ষত্রের নামে নামকরণ হয়েছে ভাদ্র মাস। আশ্বিনী বা অশ্বিনী নক্ষত্রের নামে নামকরণ হয়েছে আশ্বিন মাসের। কৃত্তিকা নক্ষত্র থেকে নামকরণ হয়েছে বাংলা কার্তিক মাসের। মৃগশিরা নক্ষত্রের নামে বাংলা অগ্রহায়ণ মাসের নাম হয়েছে অগ্রহায়ণ। এখানে মৃগশিরা নক্ষত্রের নামের বাংলা মাসকে অগ্রহায়ণ বলে- এইজন্য যে, এক সময় ঐ মাস থেকে বছর আরম্ভ হতো বা প্রথম মাস হিসেবে গণনা হতো। অগ্র মানে আগা, আর হায়ণ মানে বছর। অর্থাৎ অগ্রহায়ণ শব্দের অর্থ অগ্রবছর। পূর্বে বছরের প্রথম মাস গণনা করা হতো বাংলা অগ্রহায়ণ মাস থেকে। পরে সম্রাট আকবরের সময় থেকে বাংলা বৈশাখ মাসকে বছরের প্রথম মাস হিসেবে ধরা হয়। তারপর পূষ্যা  নক্ষত্র থেকে হয়েছে বাংলা পৌষ মাস। আর মঘা নক্ষত্রের নামে বাংলা মাঘ মাসের নামকরণ হয়েছে। এমনিভাবে পূর্ব ফালগুনী বা ফাল্গুনী নক্ষত্রের নামে হয়েছে ফাল্গুন এবং চিত্রা নক্ষত্রের নামে বাংলা চৈত্র মাসের নামকরণ হয়েছে। বঙ্গাব্দের এই বারোমাসের নামকরণগুলো গৃহীত হয়েছে জ্যোতির্বিজ্ঞান বিষয়ক প্রাচীন গ্রন্থ ‘সূর্যসিদ্ধান্ত’ থেকে।

তবে কবে, কখন, কিভাবে পূর্ণাঙ্গ বারোমাস ও সপ্তাহের দিনগুলোর নাম আমাদের সমাজ ও জাতীয় জীবনে স্থিতি লাভ করেছে তা এখনও গবেষণার বিষয়।
বাংলা বার মাসের নামকরণ বাংলা বার মাসের নামকরণ Reviewed by sm sohage on July 01, 2018 Rating: 5

ইংরেজি সাতদিনের নামকরনের ইতিহাস

July 01, 2018
নানান সময় নানান ধরনের কাহিনির মধ্য দিয়ে এই দিনগুলোর নামকরণ করা হয়েছে। সম্পূর্ণ অলীক ও ভিত্তিহীন বিষয়ের ওপর নির্মিত ইংরেজি সাতটি দিনের নাম হলো সানডে, মানডে টুয়েসডে, ওয়েডনেসডে, তার্সডে, ফ্রাইডে ও স্যাটারডে।  অযৌক্তিক ঘটনাবলীর মধ্য দিয়ে এই নামগুলোর শুরু হলেও যুগের ক্রমবির্তনের সাথে সাথে ওই নামগুলোরই নতুন সংস্করণ বর্তমানে সমাজে প্রচলিত রয়েছে।

 
স্যাটারডে: অনেক দিন আগে রোমান শাসনামলে লোকদের বিশ্বাস ছিল ‘সাটার্ন’ নামের দেবতা তাদের চাষাবাদ দেখাশোনা করেন। আরও বিশ্বাস ছিল এ দেবতাই রোদ-বৃষ্টি, ঝড়-তুফান নিয়ন্ত্রণ করেন। কাজেই সার্টন দেবতাকে খুশি করার জন এলাকজন একটি গ্রহের নামের পাশাপাশি একটি দিনের নামও ঠিক করে ‘সার্টনির্ডায়েজ’ (Satuidaeg)। সেদিনের সেই নামটিই আজকের স্যাটারডে (Satuarday)।

সানডে : 
দিনগুলোর মধ্যে প্রথমেই আসে সানডের কথা। প্রাচীনকালে ইউরোপের দক্ষিণাঞ্চলীয় লোকেরা মনে করতো এক জন দেবতা প্রতিদিন ‘সান’ নামের আলো পিণ্ড বা বল আকাশে টেনে তোলে আর নামায়। আলোর এ পিণ্ডকে ল্যাটিনরা বলতো ‘সোলিস’ (Solis), তাই তারা একদিনের নাম নির্ধারণ করে ‘ডাইচ সোলিস (Dies Solis) যার অর্থ ‘সূর্যের দিন’। উত্তর ইউরোপের লোকেরা একে বলতো ‘সাননানজায়েজ’।  ক্রমে সময়ের ব্যবধানে এ ‘সাননানজায়েজ’ (Sunnadaeg) আজকের সানডে (Sunday) রূপে পরিচিতি লাভ করে।

 

মানডে: দক্ষিণ ইউরোপের লোকেরা রাতের আকাশে ঝলমলে চাঁদকে (moon) ‘সালভার বল’ মনে করে একে ‘লুনা’ (Luna) বলতো। পরে ল্যাটিন, ভাষায় এই দিনের নাম ‘লুনায়েডাইস’ (Lunaedies) হয়। উত্তর ইউরোপের লোকেরা চাঁদের (moon) নামের সঙ্গে একটি দিনকে বলা শুরু করে ‘মোনানডায়েচ’ (Monandaeg)। যা এখন মানডে (monday) নামে পরিচিত।

টুয়েসডে: আগের দিনে দক্ষিণ ইউরোপের লোকদের বিশ্বাস ছিল ‘টিউ’ (Tiw) নামের একজন রণদেবতা আছেন। তিনি পাহাড়ে থাকেন। এই দেবতাকে যারা পূজো দেয় তাদেরকে ‘টিউ’ সাহায্য করেন। কোনো যোদ্ধা যুদ্ধে মৃত্যুবরণ করলে দেবতা ‘টিউ’ সাহায্য করেন। তারপর একদল সুন্দরী নারীকর্মী সঙ্গে করে ওই মৃত যোদ্ধাকে এক মনোরম জায়গায় নিয়ে যান। লোকেরা এই ‘টিউ’ দেবতার সম্মানে একদিনের নাম করে ‘টিউয়েজডায়েচ’ (Tiwesdaeg)। যা ইংরেজিতে আজকের টুয়েসডে (Tuesday)।


ওয়েডনেসডে: উত্তর ইউরোপের লোকেরা বিশ্বাস করতো ‘উডেন’ (wden) নামের দেবতা সব দেবতার চেয়ে শক্তিশালী। দেবতা উডেন জ্ঞানের সন্ধ্যানে সর্বত্র ঘুরে বেড়ান। তার মাথায় আছে ঢেউ খেলানো বিরাট ‘হ্যাট’, যার আড়ালে একটি চোখ ঢেকে থাকতো। উডেনের দু’কাধে বসে থাকে দুটি কালো পাখি। তারা ছিল আসলে গুপ্তরে। রাতের বেলা পাখি দুটো পৃথিবীতে নেমে আসে আর সকালে উডেনের কাছে ফিরে গিয়ে রাতে কি কি দেখেছে বিস্তারিত বর্ণনা করে। এভাবেই পৃথিবীতে তখন কি ঘটেছে না ঘটেছে উডেন তা স্বর্গে বসেই জেনে নিতেন। এ দেবতার স্মরণে লোকেরা একটি দিনের নাম দেয় ‘উডেনেসডায়েচ’ (Wednesdaeg)। যাকে আমরা এখন ‘ওয়েডনেসডে’ (Wednesday) নামে চিনি।


থার্সডে: অনেকদিন আগে মানুষ বিদ্যুত্ চমকানো ও বজ্রপাতের কারণ সম্পর্কে কিছুই জানতো না। কিন্তু এসব তারা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতো। তাদের মধ্যে বিশ্বাস জন্মালো এসব ঘটে একজন দেবতার দ্বারা। উত্তর ইউরোপের লোকেরা এ দেবতার নাম দেয় ‘থর’ (Tour)। তারা মনে করতো দেবতা থর যখন খুব রেগে যান তখন আকাশে বিশাল হাতুড়ি ছুঁড়ে মারেন যা আগুন বা আলো হয়ে দেখা যায়।  হাতুড়িটা ছুঁড়ে মেরে দেবতা থর তার দুটি ছাগলের টানা গাড়িতে গিয়ে বসেন। গাড়িটি আবার চলতে থাকে। তখন এর চাকার যে শব্দ হয় তা-ই মেঘের গর্জন অর্থাত্ তখনকার লোকদের ধারণা ছিল আজকের যে মেঘের গর্জন তা ছিল থর দেবতার গাড়ির চাকার। যাই হোক, তারা দেবতা থর-এর সম্মানে একটি দিনের নাম রাখে ‘থরেসডায়েচ’ (Thoresdaeg)। সেই থেকেই উত্পত্তি হয় আজকের থার্সডে (Thursday)।

   ফ্রাইডে: প্রাচীন লোকদের ধারণা ছিল ‘ওডিন’ (Odin) নামের সবচেয়ে শক্তিশালী দেবতার স্ত্রী ‘ফ্রিগ’ (Frigg) খুব বদ্র ও সুন্দরী দেবী। এই দেবী দেবতা ওডিনের পাশে বসে সমস্ত পৃথিবী পর্যবেক্ষণ করেন। ফ্রিগ দেবীই সব দেব-দেবতার প্রেম পরিণয়সহ সমস্ত প্রকৃতি নিয়ন্ত্রণ করেন। সুতরাং লোকজন তার সম্মানে একটি দিনের নাম ঠিক করে ‘ফ্রিগেডোয়েজ’ (Frigdaeg)। আর এ ফ্রিগডায়েজ থেকে জন্ম নিলো ‘ফ্রাই ডে’ (Friday)।

তথ্যসুত্র: দৈনিক ইত্তেফাক
ইংরেজি সাতদিনের নামকরনের ইতিহাস ইংরেজি সাতদিনের নামকরনের ইতিহাস Reviewed by sm sohage on July 01, 2018 Rating: 5
Powered by Blogger.