ইংরেজি বার মাসের নামকরণ


 ইংরেজি বর্ষ পালন করা হয় গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী।  গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের আগে ছিল জুলিয়ান ক্যালেন্ডারের প্রচলন। জুলিয়ান ক্যালেন্ডারেরও আগে রোমানরা গ্রিক পঞ্জিকা অনুযায়ী বছর ধরতো ৩০৪ দিনে। যাকে ১০ মাসে ভাগ করা হয়েছিল। জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারির জন্ম তখনো হয়নি। মার্চ ছিল বছরের প্রথম মাস। এক সময় রাজা নুমা পম্পিলিয়াস দেখলেন ৩০৪ দিন হিসেবে বছর করলে প্রকৃতির সঙ্গে মিলছে না। খ্রিস্টপূর্ব ৭৯৩ অব্দে তিনি বছরের সাথে যোগ করলেন আরো ৬০ দিন। বছরের দিন বৃদ্ধি পেল ঠিকই সঙ্গে সমস্যাও বৃদ্ধি পেল। ঋতুর চেয়ে সময় এগিয়ে আছে ৩ মাস। তখনই জুলিয়াস সিজার ঢেলে সাজালেন বছরকে।  নতুন দুটি মাস জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিকে নিয়ে এলেন বছরের প্রথমদিকে।

এবার দেখা যাক কিভাবে এলো এই ইংরেজি মাসের নাম—

জানুয়ারি : রোমে ‘জানুস’ নামক এক দেবতা ছিল। রোমবাসী তাকে সূচনার দেবতা বলে মানতো। কোনোকিছু করার আগে তারা এই দেবতার নাম স্মরণ করতো। তাই বছরের প্রথম নামটিও তার নামে রাখা হয়। আরেকটি তথ্য মতে, ‘জানুস’-এর ছিল দুটি মুখ। একটি সামনে, অন্যটি পেছনে। একটি মুখ তাকিয়ে আছে অনাগত ভবিষ্যতের দিকে, অন্যটি বিদায়ী অতীত পানে। আর তাই তার সাথে মিল রেখে জানুয়ারিকে বছরের প্রথম মাস করা হয়।

 ফেব্রুয়ারি: যিশুখ্রিস্টের জন্মের ৪৫০ বছর আগে দ্বিতীয় মাস হিসেবে ফেব্রুয়ারির প্রচলন ছিল। সেকালে রোমানরা ‘ফেব্রুয়া’ নামে চিত্তশুদ্ধির উত্সব পালন করতো। ‘ফেব্রুয়া’ মানে পবিত্র। রোমানরা তাই এই মাসটিকে পবিত্র মনে করে।

 মার্চ: রোমান যুদ্ধ দেবতা ‘মারস’-এর নামানুসারে তারা মার্চ মাসের নামকরণ করেন।
  
এপ্রিল: বসন্তের দ্বার খুলে দেওয়াই এপ্রিলের কাজ। তাই কেউ কেউ ধারণা করেন ল্যাটিন শব্দ ‘এপিরিবি’ (যার অর্থ খুলে দেওয়া) থেকে এপ্রিল এসেছে।

মে: রোমানদের আলোকে দেবী ‘মেইয়ার’-এর নামানুসারে মাসটির নাম রাখা হয় মে।

জুন :রোমানদের নারী, চাঁদ ও শিকারের দেবী ছিলেন ‘জুনো’। আর তার নামেই জুনের নামকরণ করেন তারা।

জুলাই: জুলিয়াস সিজারের নামানুসারে জুলাই মাসের নামকরণ। মজার ব্যাপার হচ্ছে, বছরের প্রথমে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিকে স্থান দিয়ে তিনি নিজেই নিজেকে দূরে সরিয়ে দেন। জুলাই মাসের নাম আগে ছিল ‘কুইন্টিলিস’ এর অর্থ পঞ্চম। জুলিয়াস সিজার যখন রোমের সম্রাট হন তখন তিনি নিজের নামটিকে বিশেষভাবে চিহ্নিত করার জন্যই কুইন্টিলিস-এর পরিবর্তে নাম দিলেন নিজের নাম জুলিয়াস। এতেও কিন্তু জুলিয়াস ক্ষান্ত হলেন না, আরো গৌরব বাড়ানোর জন্য ৩০ দিনের এ মাসকে করলেন ৩১ দিন। কিন্তু বছর তো আর ৩৬৫ দিন থেকে বেড়ে ৩৬৬ দিন হতে পারে না। তাই রোমান পণ্ডিতরা ফেব্রুয়ারি মাসকে ৩০ দিন থেকে কমিয়ে ২৯ দিন করতে বাধ্য হলেন।
  
আগস্ট:  আগস্ট এর পুর্ব নাম ছিল ‘সিক্সিলিস’ ষষ্ঠ।  পরে জুলিয়াস সিজারের পর রোমের সম্রাট হন তারই ভাইয়ের ছেলে অগাস্টাস সিজার।  তারই নামানুসারে এই মাসটির নামকরণ করা হয় ‘আগস্ট’।

সেপ্টেম্বর: সেপ্টেম্বর শব্দের শাব্দিক অর্থ সপ্তম। কিন্তু সিজারের বর্ষ পরিবর্তনের পর তা এসে দাঁড়ায় নবম মাসে। তারপর এটা কেউ পরিবর্তন করেনি।

অক্টোবর: ‘অক্টোবর’-এর শাব্দিক অর্থ অষ্টম। সেই মতে এটা অষ্টম মাস হওয়ার কথাঅ কিন্তু সেই অষ্টম মাস আমাদের ক্যালেন্ডারের এখন স্থান পেয়েছে দশম মাসে।

নভেম্বর : ‘নভেম’ শব্দের অর্থ নয়। সেই অর্থানুযায়ী তখন নভেম্বর ছিল নবম মাস। জুলিয়াস সিজারের কারণে আজ নভেম্বরের স্থান এগারোতে।

ডিসেম্বর: ল্যাটিন শব্দ ‘ডিসেম’ অর্থ দশম। সিজারের বর্ষ পরিবর্তনের আগে অর্থানুযায়ী এটি ছিল দশম মাস।  কিন্তু আজ আমাদের কাছে এ মাসের অবস্থান ক্যালেন্ডারের শেষপ্রান্তে।


তথ্যসুত্র: দৈনিক ইত্তেফাক

ইংরেজি বার মাসের নামকরণ ইংরেজি বার মাসের নামকরণ Reviewed by sm sohage on July 02, 2018 Rating: 5

No comments:

Powered by Blogger.