বরিশাল নামকরণ সম্পর্কে বিভিন্ন মতভেদ রয়েছে। এক কিংবদন্তি থেকে জানা যায় যে, পূর্বে এখানে খুব বড় বড় শাল গাছ জন্মাতো, আর এই বড় শাল গাছের কারণে (বড়+শাল) বরিশাল নামের উৎপত্তি। কেউ কেউ দাবি করেন, পর্তুগীজ বেরি ও শেলির প্রেমকাহিনীর জন্য বরিশাল নামকরণ করা হয়েছে। অন্য এক কিংবদন্তি থেকে জানা যায় যে, গিরদে বন্দরে (গ্রেট বন্দর) ঢাকা নবাবদের বড় বড় লবণের গোলা ও চৌকি ছিল। ইংরেজ ও পর্তুগীজ বণিকরা বড় বড় লবণের চৌকিকে ‘বরিসল্ট’ বলতো। অথাৎ বরি (বড়) + সল্ট (লবণ)= বরিসল্ট। আবার অনেকের ধারণা এখানকার লবণের দানাগুলো বড় বড় ছিল বলে ‘বরিসল্ট’ বলা হতো। পরবর্তিতে বরিসল্ট শব্দটি পরিবর্তিত হয়ে বরিশাল নামে পরিচিতি লাভ করে।
বরিশাল জেলার উপজেলা সমুহঃ বরিশাল সদর, বাকেরগঞ্জ, বাবুগঞ্জ, উজিরপুর , বানারীপাড়া, গৌরনদী, আগৈলঝাড়া, মেহেন্দিগঞ্জ, মুলাদী , হিজলা।
বাকেরগঞ্জ উপজেলা
স্বাধীন বাংলার নবাব আলীবর্দী খানের আমলে বুজুর্গ উমেদপুরের জমিদার ঢাকার আগা বাকের খান এ অঞ্চলে ১৭৪১ খ্রিঃ নিজ নামে গঞ্জ প্রতিষ্ঠা করেন তাঁর নাম অনুসারে এ অঞ্চলের নাম রাখা হয় বাকেরগঞ্জ ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী আমল১৭৯৭ খ্রিঃ বাকেরগঞ্জ জেলা প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮০১ সালে জেলা সদর বাকেরগঞ্জ থেকে বরিশালে স্নানান্তর করা হয় বাকেরগঞ্জ জেলা নামটি ১৭৯৭ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত ছিল। ১৯৯৩ সালে বরিশাল বিভাগ সৃষ্টির ফলে বাকেরগঞ্জ নামটি জেলা থেকে বাদ দেয়া হয়। জেলা সদর বরিশালের নামে বিভাগের নামকরণ করা হয়। আগা বাকের খান এর স্মৃতি বিজড়িত বাকেরগঞ্জ নামটি বর্তমানে বাকেরগঞ্জ উপজেলাতেই সীমাবদ্ধ রয়েছে।
বাবুগঞ্জ উপজেলা
বাবুগঞ্জ নামকরণ সম্পর্কে র্নিভরযোগ্য ইতিহাস পাওয়া না গেলেও ইতিহাস বর্ণনায় জানা যায়, আজ থেকে ৪০০ বছর আগে এ অঞ্চলে বসবাসরত বেশ ক’জন হিন্দু জমিদার তাদের প্রয়োজনে বাবুগঞ্জ উপজেলা সদরের বর্তমান বাজারটি মেলায়।ঐ সময়ে এ অঞ্চলের লোকজন জমিদারদের বাবু বলে সম্বোধন করতো।আর বাজারটিকে তারা অভিহিত করতো গঞ্জ বলে।ফলে জমিদার বাবুদের মেলানো গঞ্জ থেকে এ এলাকার নাম হয় বাবুগঞ্জ।অন্য এক তথ্যানুসারে বলা হয় যে, যশোর পরগনার জমিদার ‘ বাবু বিরাজ রায় চৌধুরী’ এই অঞ্চল প্রাপ্ত হয়ে এখানে একটি বাণিজ্য কেন্দ্র (গঞ্জ) প্রতিষ্ঠা করেন। বাবু বিরাজ রায় চৌধুরীর নামানুসারে এলাকার নাম হয় বাবুগঞ্জ।
উজিরপুর উপজেলাঃ
কিংবদন্তী থেকে জানা যায়, পতুর্গীজ আমলে উজির-আল-মামুন নামে এক জলদস্যু শেখের বাগ এলাকায় বাস করতো। সেখান থেকেই সে সন্ধ্যা নদীতে দস্যুতা করে বেড়াতো। তার নাম অনুসারে গ্রামের নাম হয় উজিরপুর। আবার উজিরপুর নামকরণেল ক্ষেত্রে সাধারণ ধারণা, ‘ফকির মোহাম্মদ’ নামে মুর্শিদাবাদ নবাবের এক উজির এই অঞ্চলে দীর্ঘকাল ধরে বসবাস করতেন। এই উজিরের নাম থেকে এলাকার নাম হয় উজিরপুর।
গৌরনদী উপজেলাঃ
‘‘গৌরনদী’’ র নামকরন নিয়ে সুনিদৃষ্ট কোন লিখিত ইতিহাস নেই। ‘‘গৌরনদী’ র নামকরন সম্পর্কে প্রবীনদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যই মানুষ জানে এক সময় গৌরনদী সদরসহ বৃহত্তর গৌরনদী (আগৈলঝাড়াসহ) র গোটা এলাকা ছিল নদী দ্বারা বেষ্ঠিত। গৌরনদীর পূর্বাঞ্চলে রয়েছে আড়িয়াল নদী। আর আড়িঁয়াল খার শাখা নদী হচ্ছে পালরদী নদী।এক সময় পালরদী ছিল স্রোতস্বীনি নদী গৌরনদীর প্রবীনজন ও ইতিহাসবিদদের সংজ্ঞা মতে, আড়িঁয়াল খাঁ নদীর শাখা নদী পালরদী নদীকে ঘিরেই গৌরনদীর নামকরন করা হয়। এ নদীর সাথে গৌরনদীর সংযুক্ততা রয়েছে।আড়িঁয়াল খাঁ নদীর শাখা নদী পালরদী নদীর প্রবাহমান পানির রং ছিল গৌড় বর্নের অনুসারে গৌড়্ওবং নদী যুক্ত হয়ে ‘‘গৌরনদী’ র নামকরন করা হয়েছে গৌরনদী কলেজের প্রতিষ্ঠতা অধ্যক্ষ মোঃ তমিজউদ্দিন ও গৌরনদীর ইতিহাস লেখক প্রফেসর মোসলেম উদ্দিন সিকদারের একাধিক লেখায় গৌরনদীর নামকরনের আদী ইতিহাস হিসেবে এ তথ্যের উল্লেখ্য রয়েছে। রবরিশালের ইতিহাস লেখক সিরাজ উদ্দিন আহম্মেদ তার বইয়ে নদীর নামানুসারে গৌরনদীর নামকরনের কথা উল্লেখ করেছেন।
আগৈলঝাড়া উপজেলাঃ
সতের শতকে নবাব আলী খাঁর আমলে তাঁর এক সুবাদার ছবি খাঁ এ পরগনার (আগৈলঝাড়া, গৌরনদী, উজিরপুর, কোটালীপাড়া)কিয়দংশের দায়িত্বে থাকাকালে প্রজা শাসনের পাশাপাশি কিছু জনহিতকর কাজ করে স্মরণীয় হয়ে আছেন। তিনি পরগণার ভেতর দাস শ্রমিকদের দিয়ে এক রাতের মধ্যে একটি দিঘি খনন করাতেন। দিঘি খনন শেষে শ্রমিকরা নির্দিষ্ট জায়গায় তাদের আগৈল (মাটি কাটার ঝুড়ি) ঝাড়তো। সেখানে একটি মাটির টিবি গড়ে উঠে এবং ক্রমান্বয়ে তার কলেবর বৃদ্ধি পায়। ফুল্লশ্রীর এক অংশে লোকালয় গড়ে উঠলে তার নামকরণ করা হয় আগৈলঝাড়া।
মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলাঃ
অনুমান করা হয়, আগা বাকেরের সময়ে ‘মেহেন্দী খান’ নামে তাঁর এক প্রতিনিধি এই এলাকায় এসে একটি বাণিজ্য কেন্দ্র (গঞ্জ) গড়ে তোলেন। তার নামানুসারে এলাকার নাম হয় মেহেন্দীগঞ্জ। এছাড়া বলা হয়ে থাকে, আগা বাকেরের এক পুত্রের নাম ছিল মেহেদী খান, যার নাম থেকেও মেহেন্দীগঞ্জ নামকরণ হতে পারে।
মুলাদী উপজেলাঃ
মুলাদী উপজেলার ক্ষেত্রে বলা হয়ে থাকে, ‘মুলাই খান’ নামক এক বিখ্যাত দরবেশ এ্ই অঞ্চলে বাস করতেন। তিনি বিভিন্ন ধর্মীয় কাজের জন্য এই এলাকায় খুবই বিখ্যাত ছিলেন মনে করা হয়। মনে করা হয়, এই মুলাই খানের নামানুসারে এই জনপদের নাম হয়েছে মুলাদী। মুলাদীর ‘দী’ শব্দাংশটি সম্ভবত দ্বীপ হতে। বর্তমান মুলাদী উপজেলা বিশাল বিশাল নদী বেষ্টিত দ্বীপসদৃশ একটি ভূখন্ড। এই ভূখন্ডে মুলাই খান ইসলাম প্রচারের জন্য এসে আস্তানা স্থাপন করতে তা ‘মুলাই দ্বীপ’ নামে পরিচিতি পায় এবং লোকমুখে বিবর্তিত ও সংক্ষিপ্ত হয়ে মুলাদ্বীপ এবং তা হতে বর্তমান মুলাদী রুপলাভ করেছে। এছাড়া ‘দী’ শব্দটি ডিহি শব্দের অপভ্
রংশ হতে পারে। একসময় (1922 সালের পূর্বে) কয়েকটি মৌজা নিয়ে একটি তৌজি এবং কয়েকটি তৈৗজি নিয়ে একটি ডিহি গড়ে উঠতো। আজকের মুলাদী একসময় একটি ডিহি ছিল এবং তা মুলাই খানের নামানুসারে মুলাই ডিহি নামে পরিচিত ছিল। পরে লোকমুলে পরিবর্তিত হয়ে মুলাদী নাম ধারণ করা অস্বাভাবিক নয়।
রংশ হতে পারে। একসময় (1922 সালের পূর্বে) কয়েকটি মৌজা নিয়ে একটি তৌজি এবং কয়েকটি তৈৗজি নিয়ে একটি ডিহি গড়ে উঠতো। আজকের মুলাদী একসময় একটি ডিহি ছিল এবং তা মুলাই খানের নামানুসারে মুলাই ডিহি নামে পরিচিত ছিল। পরে লোকমুলে পরিবর্তিত হয়ে মুলাদী নাম ধারণ করা অস্বাভাবিক নয়।
হিজলা উপজেলাঃ
জনশ্রুতি থেকে জানা যায়, এই অঞ্চল হিজল গাছে আচ্ছাদিত ছিল। এই হিজল গাছ থেকে হিজলা নামের উদ্ভব বলে ধারণা করা হয়।
বরিশাল জেলা ও এর উপজেলা সমূহের নামকরণের ইতিহাস
Reviewed by sm sohage
on
July 31, 2018
Rating:
No comments: