বরগুনা জেলা ও এর উপজেলা সমূহের নামকরণের ইতিহাস

বরগুনা নামের সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য পাওয়া না গেলেও জানা যায় যে, উত্তরাঞ্চলের কাঠ ব্যবসায়ীরা এ অঞ্চলে কাঠ নিতে এস খরস্রোতা খাকদোন নদী অতিক্রম করতে গিয়ে অনুকুল প্রবাহ বা বড় গোনের জন্য এখানে অপেক্ষা করত বলে এ স্থানের নাম হয় বড় গোনা।কারো মতে আবার স্রোতের বিপরীতে গুন (দড়ি) টেনে নৌকা অতিক্রম করতে হতো বলে এ স্থানের নাম বরগুনা। কেউ কেউ বলেন, বরগুনা নামক কোন প্রভাবশালী রাখাইন অধিবাসীর নামানুসারে বরগুনা।  আবার কারো মতে বরগুনা নামক কোন এক বাওয়ালীর নামানুসারে এ স্থানের নাম করণ করা হয় বরগুনা।
আমতলী ‍উপজেলা
লোকশ্রুতি আছে সুদূর অতীতকালে পায়রা নদীর তীরে বহু আম গাছ ছিলমাঝিরা  তাদের নৌকা বাঁধত সেই আম গাছের সাথে নৌকা  বাঁধার স্থানটি কালে কালে হয়ে যায় আমতলা থেকে আমতলী। অন্যদিকে,  পায়রা নদীর একটি প্রবাহ আমতলী বন্দরের পূর্ব দিক দিয়ে উত্তর থেকে দক্ষিণ দিকে আমতলী নদী প্রবাহিত হয়েছিল।  নৌযান চলাচল মুখরিত আমতলী নদীর তীরে পাঠান আমলে গড়ে ওঠেছিল জনবসতি ও বাণিজ্যিক কেন্দ্র।  মোগল যুগে পায়রা  নদীতে মগ, পর্তুগীজদের লুণ্ঠন ও অত্যাচার বেড়ে গেলে অপেক্ষাকৃত নিরাপদ আমতলী নদীই ছিল একমাত্র ভরসা। এ নদীর নাম অনুসারে এলাকার নাম হতে পারে আমতলী।  আবার, অতীতে  আমতলী যখন অরণ্য আচ্ছাদিত  হয়ে  দুর্গম এলাকা হিসেবে ছিল তখন আরকান থেকে আগত জনৈক আমপাটি  নামক  মগ দলপতি ইংরেজি সরকার থেকে ইজরা নিয়ে আমতলী প্রথম আবাদ শুরু করে ছিলেন। সম্ভবতঃ  আমপারিট মগের নাম অনুসারেও এলাকায়  নাম আমতলী হতে পারে।
বামনা উপজেলাঃ
বামনার নামকরণ নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে। কারও মতে শফি মাহমুদ চৌধুরী কর্তৃক নির্মিত কালী মন্দিরের ব্রাহ্মণ পুরোহিত কীর্তি চরণ মুখপাধ্যায়কে স্থানীয় লোকজন ব্রাহ্মণ শব্দের অপভ্রংশ বামনা হিসেবে ডাকত। তার ডাক নামানুসারেই বামনা নামের উৎপত্তি হয়। কারও মতে তৎকালীন সুন্দর বন এলাকার আওতাভুক্ত বিষখালী নদী দিয়ে বাওয়ালীরা নৌকায় যাতায়াত করত । এক সময় বামন নামক কোন এক বাওয়ালী নৌকা থেকে পড়ে গিয়ে নিখোঁজ হলে তার নামানুসারে বামনা নাম করণ হয়। কারও মতে একদল মৌলবাদী পর্যটক ধর্ম প্রচারের জন্য এখানে আসেন এবং ধর্ম প্রচার শুরু করেন। কিন্তু বেশীর ভাগ লোকই বামপন্থী মনা হওয়ায় তাদেরকে ধর্মের দিকে আকৃষ্ট করতে পর্যটক দল ব্যর্থ হয়ে এলাকার মানুষকে বাম মনা উপাধি দেয়। এই বাম+মনা থেকেই বামনা শব্দের উদ্ভব হয়। আরও প্রসিদ্ধ প্রচলন রয়েছে যে, চীন দেশ থেকে চেং ইয়াং নামে এক নাবিক পাঁচটি সম্প্রদায়ের লোক এবং কিছু যন্ত্রপাতি ও পশু -পাখি নিয়ে জাহাজ চালিয়ে এখানে এসে বর্তমান চেঁচানে নামেন ।  চেঁচান নামটি প্রধান নাবিক চেং ইয়াং-এর নামানুসারে হয়েছে। এই পাঁচটি সম্প্রদায়ের মধ্যে এক দল ছিলেন ব্যবসায়ী যারা বাণিজ্যের লক্ষ্যে এসেছিলেন, এক দল ছিলেন কৃষিজীবী যারা কৃষি কাজ করতেন, এক দল ছিলেন নাবিক যারা জাহাজ বা নৌকায় পারাপার ও পরিবহনের কাজ করতেন, এক দল ছিলেন রাখাল যারা পশু পালন ও চারন করতেন এবং এক দল ছিলেন ব্যায়ামবিদ যারা নিরাপত্তা ও যুদ্ধ-বিগ্রহের দায়িত্ব পালন করতেন।  ইংরেজীতে এ পাঁচ সম্প্রদায়ের নাম হল ব্যবসায়ী = Businessman যা থেকে B, কৃষিজীবী= Agriculturist যা থেকে A, নাবিক = Mariner যা থেকে M, রাখাল= Nomad যা থেকে N এবং ব্যায়ামবিদ= Acrobat যা থেকে A । এই সম্প্রদায়গুলোর নামের পাঁচটি আদ্যাক্ষর দিয়ে B+A+M+N+A= BAMNA যা বাংলায় বামনা নামকরণ করা হয়।
পাথরঘাট উপজেলা
পাথরঘাটা নামকরণের সঠিক ইতিহাস সম্পর্কে প্রায় তেমন কিছুই জানা যায় না। তবে জনশ্রুতি রয়েছে যে, এ উপজেলার ভূ-অভ্যন্তরে বিদ্যমান পাথরের অস্তিত্ব থেকেই পাথরঘাটা নামকরণের সূচনা হয়েছিল। ১৯০৩ সনে এ নামকরণ সূত্রপাতঘটে মর্মে ধারণা করা হয়। তৎকালীন বৃটিশ আমলে চট্রগ্রাম মাইজ ভান্ডার শরীফ থেকে বাগেরহাটের খাজা খান জাহান আলী নদীপথে অলৌকিকভাবে বাগেরহাটে পাথর ভাসিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় বিশখালী এবং বলেশ্বর নদীর মোহনায় এক রাতের জন্য ঘাটি স্থাপন করেছিলেন। উক্ত পাথরের কিয়দংশ এখানে রয়ে যায়। সে কারণেই এলাকাটি পাথরঘাটি নামে পরিচিতি লাভ করে। পরবর্তীতে পাথরঘাটি নামটি পাথরঘাটা নামে নবরূপ লাভ করে।


বেতাগী উপজেলাঃ
বেতাগী শব্দের নামকরণের ক্ষেত্রে বিভিন্ন মত রয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশের মতে বেদাগী থেকে বেতাগী নামের সূত্রপাত হয়েছে বলে মনে করা হয়। অষ্টাদশ প্রথম দিকে ইংরেজ শাসকরা শত শত নিরীহ লোক ধরে এনে দক্ষিণ জনপদে লবন চাষ করাতে কৃষকদের উপর নানারকম জোর জবরদস্তি ও নির্যাতন চালাতো। এমনকি তাদেরকে তামাক সেবনেও অভ্যস্ত করতো বলে জানা যায়। এসময় তৎকালীন শাসনামলে বুজুর্গ উমেদপুরের প্রতাপশালী জমিদার ও কৃষক নেতা আইন উদ্দীন সিকদার এ অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন ও গড়ে তোলেন ও কৃষকদের সংগঠিত করে লবন চাষের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেন। এতে দাঙ্গা-হাঙ্গামায় অনেক ইংরেজও মারা যায়। ইংরেজরা আইন উদ্দিন সিকদারের বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করে ও তাকে কুখ্যাত ডাকাত হিসেবে আখ্যায়িত করে। ১৭৮৯ সালে তার জমিদারী কেড়ে নেয়া হয় এবং তাকে গ্রেফতার করে নির্বাসনে পাঠানো হয়। সে সময়ের ধর্মীয় নেতা নেয়ামত শাহের নিকট এলাকার জনসাধারন আইন উদ্দিন সিকদারের মুক্তির জন্য সাহায্য চাইলে তিনি তৎকালীন ঢাকাস্থ মোগল সুবেদার ইসলাম খার নিকট আইন উদ্দিন সিকদারের পক্ষে সুপারিশ করে একটি পত্র প্রেরণ করেন। এ চিঠিতে তাকে দাগী নয়, বেদাগী (অপরাধী নয়) বলে আখ্যায়িত করে। ফরাসী শব্দ বেদাগী থেকেই কালক্রমে বেতাগী শব্দের রুপান্তরিত হয়ে বেতাগীর উদ্ভব হয় বলে ধারনা করা হয়।
এছাড়া বেতাগী অঞ্চলে আগে অনেক বেত পাওয়া যেত এবং বেতের আগা একটি জনপ্রিয় সবজি হিসাবে সকলের কাছে বেশ কদর ছিল। সেই "বেতাগা" এর সূত্র ধরে বেতাগীর উৎপত্তি হতে পারে। বেতাগীর নামকরণে আবার কেউ কেউ মনে করেন, ইংরেজদের কাউকে কোন কাজে বাধ্য না করাতে পারলে চরম বেত্রাঘাত করত। এখানের মানুষ প্রতিবাদী হওয়ার কারনে আরও বেশি বেত্রাঘাতের স্বীকার হত। এই বেত্রাঘাত শব্দানুসারে বেতাগী নামের সৃষ্টি হয়েছে।


n style="font-family: "solaimanlipi"; font-size: 18.6667px;">তথ্যসুত্রঃ জেলা তথ্যবাতায়ন, উইকিপিডিয়া।
বরগুনা জেলা ও এর উপজেলা সমূহের নামকরণের ইতিহাস বরগুনা জেলা ও এর উপজেলা সমূহের নামকরণের ইতিহাস Reviewed by sm sohage on July 31, 2018 Rating: 5

No comments:

Powered by Blogger.