শেরপুর জেলা ও এর উপজেলা সমূহের নামকরনের ইতিহাস


শেরপুর অঞ্চল প্রাচীনকালে কামরূপা রাজ্যের অংশ ছিল। মুঘল সম্রাট আকবরের শাসনামলে এই এলাকা "দশকাহনিয়া বাজু" নামে পরিচিত ছিল। পুর্বে শেরপুরে যেতে ব্রহ্মপুত্র নদ খেয়া পাড়ি দিতে হত। খেয়া পারাপারের জন্য দশকাহন কড়ি নির্ধারিত ছিল বলে এ এলাকা দশকাহনিয়া নামে পরিচিতি লাভ করে। সপ্তদশ শতাব্দীর প্রথম দিকে ভাওয়ালের গাজী, ঈসা খানের বংশধর থেকে দশকাহনিয়া এলাকা দখল করে নেয়। দশকাহনিয়া পরগনা পরবর্তীতে গাজী বংশের শেষ জমিদার শের আলী গাজীর নামানুসারে শেরপুর নামে নামকরণ করা হয়
শেরপুর জেলার উপজেলা সমুহঃ শেরপুর সদর, নালিতাবাড়ী উপজেলা, শ্রীবরদী উপজেলা, নকলা উপজেলা, ঝিনাইগাতী উপজেলা।
নালিতাবাড়ী উপজেলাঃ
এক সময় এ অঞ্চলে উৎপাদিত হতো উন্নতমানের পাট। পাটের প্রতিশব্দ নলিতা বা নাইল্যা।  এই নলিতা বা নাইল্যা থেকেই উপজেলার নাম হয়েছে নালিতাবাড়ী। 
শ্রীবরদী উপজেলাঃ
শ্রীবরদী উপজেলাটির প্রাচীন নাম শম্ভুগঞ্জ।  শ্রী শম্ভুনাথ তালুকদার অত্র এলাকার জমিদারের পক্ষে খাজনা সংগ্রহ করতেন।  অনেকের মতে তার নামানুসারে এলাকাটির নাম শম্ভুগঞ্জ রাখা হয়েছিল।  কথিত আছে ‘শ্রী বর দা’নামে এক অপরুপ সুন্দরী জমিদার কন্যা ছিল।  দেখতে অপরুপ সুন্দরী এ জমিদার কন্যাকে  প্রজা সাধারন ‘শ্রী বড় দিদি’বলে সম্বোধন করতো।  সেই শ্রী বড় দিদি‘র সংক্ষিপ্ত রুপ ‘শ্রী-বর-দি’থেকে আজকের ‘শ্রীবরদী’। বর্তমানে উপজেলা সদরের মৌজার নাম শ্রীবরদী শম্ভুগঞ্জ আজও কালের স্বাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
নকলা উপজেলাঃ
“নকলা”  নামটি এসেছে আরবী ‘নাখলা’ শব্দ থেকে।  নাখলা শব্দের অর্থ খেজুরের বাগান। এই আরবী শব্দটি থেকে অনুমিত হয়,  এটি একটি প্রাচীন জনপদ। তবে এ অঞ্চলটিতে হিন্দুদের আধিক্য ছিল। পরবর্তীতে তারা স্থানান্তরিত হয়েছে অথবা প্রতিবেশী দেশ ভারতে চলে গেছে। বলাবাহুল্য, নকলা থানা স্থাপনের পূর্বে প্রসিদ্ধ ব্যবসায় কেন্দ্র ও নৌ বন্দর চন্দ্রকোনাকে থানা করার পরিকল্পনা ছিল ব্রিটিশ সরকারের। কারণ, চন্দ্রকোনায় ছিল মহারাজ শশীকান্ত চৌধুরী ও জমিদার গোপাল দাস চৌধুরীর দুটি কাচারী। যেখানে প্রজাদের নিকট থেকে খাজনা আদায় করা হতো।  ১৯১৯ সালে প্রতিষ্ঠিত প্রাচীন বিদ্যাপিঠ চন্দ্রকোনা রাজলক্ষী উচ্চ বিদ্যালয়, সূর্যবালা দেবী হাসপাতাল, পোস্ট অফিস এবং বড় বড় পাঠ ক্রয় কেন্দ্রসহ শিক্ষা ও সংস্কৃতি চর্চার প্রাণ কেন্দ্র ছিল চন্দ্রকোনা। ব্রহ্মপুত্র, দশানি আর মৃগী অববাহিকায় চন্দ্রকোনা নৌ বন্দরথেকে কলকাতা ও বিলেতে ডান্ডির সাথে সরাসরি নৌ যোগাযোগ ছিল। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে আন্দামান ফেরত বিপ্লবী নগেন্দ্র চন্দ্র মোদক, বিপ্লবী যোগেশ চন্দ্রকর্মকার এবং বিপ্লবী মন্মথ দে চন্দ্রকোনায় জন্মেছিলেন।
ঝিনাইগাতি উপজেলাঃ
31 মে 1970 সালৈ নালিতাবাড়ী থানার কিছুটা অংশ নিয়ে ঝিনাইগাতী থানা সদর প্রতিষ্ঠিত হয়। বলা হয়ে থাকে, ঝিনাইগাতি নামটি ঝিনাই এবং গাতী শব্দদ্বয়ের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে। ঝিনাই শব্দটি এসেছে ‘ঝিনুকৎ থেকে। মুক্তা আহরণের জন্য ঝিনুক সংগ্রহ করা হতো। এছাড়া ঝিনুক তেকৈ চুন, বোতাম তৈরী হতো। আর গাতি হচ্ছে জমিদারীর একটি অংশ। যে ব্যক্তি মুল জমিদারের নিকট থেকে সুনির্দিষ্ট ভুমি রাজস্বের বিনিময়ে ইজারা গ্রহণ করতেন সাধারণত তার নামে হতো গাতির নাম তবে এর ব্যতিক্রম ও হতো। এখানে ঝিনুকের নামে গাতির নাম হওয়ায় এলাকার নাম হয়েছে ঝিনাইগাতি।   

শেরপুর জেলা ও এর উপজেলা সমূহের নামকরনের ইতিহাস শেরপুর জেলা ও এর উপজেলা সমূহের নামকরনের ইতিহাস Reviewed by sm sohage on July 30, 2018 Rating: 5

No comments:

Powered by Blogger.