ঐতিহাসিক সূত্রে জানা যায়, দিল্লির সম্রাট আকবরের রাজত্বকালে (১৫৫৬-১৬০৫) হযরত শাহ জামাল (রহ.) নামে একজন ধর্মপ্রচারক ইয়েমেনে থেকে ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে ২০০ জন অনুসারী নিয়ে এ অঞ্চলে এসেছিলেন। পরবর্তীতে ধর্মীয় নেতা হিসাবে তিনি দ্রুত প্রাধান্য বিস্তার লাভ করেন। ধারণা করা হয়, শাহ জামাল-এর নামানুসারে এই শহরের নামকরণ হয় জামালপুর।
জামালপুর জেলার উপজেলা সমুহঃ জামালপুর সদর, মেলান্দহ, ইসলামপুর, দেওয়ানগঞ্জ, সরিষাবাড়ী, মাদারগঞ্জ, বকশীগঞ্জ।
মেলান্দহ উপজেলাঃ
এই উপজেলার নামকরণ নিয়ে যেটুকু শোনা যায় সেটা হচ্ছে : এর পূর্ব নাম মিলন দহ। আবার কেউ কেউ বলেন যে মেলা দহের মিলনে এই জনপদ। তাই এর নাম মেলা দহ। তবে মেলান্দহে প্রাচীণ একটি গ্রন্থাগার ছিল তার নাম ছিল মিলন মন্দির । মিলন মন্দিরটি ছিল বর্তমান মেলান্দহ বাজার সংলগ্ন কেন্দ্রীয়ঁ শ্রী শ্রী কালী মাতার মন্দির প্রাঙ্গনে অর্থাৎ মেলান্দহ কেন্দ্রীয় মসজিদ -এর দক্ষিণ পার্শে অবস্থিত ছিল বৃটিশ শাসনপূর্ব সময়কাল থেকেই। আবার বৃটিশ শাসন আমলের শেষ সময়ে অর্থৎ চারদশকের মাঝামাঝি সময়েই ধংশ হয়ে গেছে বৃটিশ নিপিড়ণ অত্যাচারে। বহু (মেলা/অনেক) দহ/বিলের মিলনে চর জেগে ওঠা এই স্থল ভূমি। তাই এর নাম মিলনদহ। জনশ্রুতিতে মিলন দহ :মেলা দহ তারপর মেলান্দহ -তে এসে ঠেকেছে। একটি দুটি বাড়ী তারপর গ্রাম। গ্রাম থেকে গ্রামের বিস্তার। তারপর থানা। থানা থেকে উপজেলা। বর্তমানের মেলান্দহ উপজেলা।
ইসলামপুর উপজেলাঃ
ইসলামপুর উপজেলার নামকরণ সম্পর্কে দুটি মত প্রচলিত আছে। প্রথম মতানুসারে, সম্রাট জাহাঙ্গীরের সময় বাংলার গভর্ণর ছিলেন ইসলাম খাঁ। ইসলামপুর নামকরণ করা হয় সুবাদার ইসলাম খার নামানুসারে। অন্যমতে শতাধিক বছর পূর্বে পুরনো ব্রক্ষ্মপুত্র নদের তীরে ইসলামপুর নামে একটি মৌজা ছিল। এই মৌজায় স্থানীয় জনগণ একটি বাজার প্রতিষ্ঠা করে। থানা সৃষ্টি হলে থানার নামকরণ হয় এই মৌজার নামানুসারে।
দেওয়ানগঞ্জ উপজেলাঃ
জনশ্রুতি অনুসারে, প্রায় দুশো বছর পূর্বে দেওয়ান শাহ জালাল ও দেওয়ান শাহজামাল নামে দুই কামেল পীর গারো পাহাড়ে তাঁদের দরগা শরীফে যাওয়ার সময় বর্তমান থানা সদরের এই স্থানে কিছু সময়ের জন্য থেমে বিশ্রাম নেন। এই দুই কামেল পীরের স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য এই জায়গার নাম রাখা হয় দেওয়ানগঞ্জ।
সরিষাবাড়ি উপজেলাঃ
তদানিন্তন বৃটিশ শাসনামলে বর্তমান চর সরিষাবাড়ী ছিল আদি সরিষাবাড়ী। খরস্রোতা যমুনার কড়াল গ্রাসে আদি সরিষাবাড়ী বিলুপ্ত। তখন নদীর নাব্যতা ছিল, চলাচল করতো ষ্টীমার, জাহাজ। নদী বিধৌত চার ইউনিয়নের পি
ংনা, পোগলদিঘা, আওনা, কামরাবাদ এর অধিকাংশ ভূমিতেই সরিষা আবাদ হতো। বীর অঞ্চলের চারটি ইউনিয়নেও প্রচুর সরিষা আবাদ হতো। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল হতে বানিজ্য করার লক্ষ্যে ব্যবসায়ীরা সরিষা কিনতে আসত। সে সময়কাল হতেই এই স্থানটির নাম রাখা হয় সরিষাবাড়ী।
ংনা, পোগলদিঘা, আওনা, কামরাবাদ এর অধিকাংশ ভূমিতেই সরিষা আবাদ হতো। বীর অঞ্চলের চারটি ইউনিয়নেও প্রচুর সরিষা আবাদ হতো। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল হতে বানিজ্য করার লক্ষ্যে ব্যবসায়ীরা সরিষা কিনতে আসত। সে সময়কাল হতেই এই স্থানটির নাম রাখা হয় সরিষাবাড়ী।
মাদারগঞ্জ উপজেলাঃ
শাহ্ মাদার একজন ধর্ম প্রচারক। তিনি সিরিয়া থেকে ধর্ম প্রচার করার জন্য এদেশে আগমন করেন। তাঁর পুরু নাম চিল সেয়দ বদিউদ্দিন কুতুব-উর মাদার। শাহ। মাদার ফকির বিদ্রোহের নেতা মজনু শাহ্ এর সাথে সরাসরি ফকির আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন।১৭৬৩ সালের দিকে শাহ্ মাদার দুর্গম এই চরে আগমন করার পর ফকিরগণ ত৭ার শিষ্যত্ব গ্রহণ করে এবং তারা মাদারিয়া সম্প্রদায় ভূক্ত হয়ে যান। ১৭৭২ সালে বর্ষায় ফকির-সন্ন্যাসী বগুড়া ও ময়মনসিংহ জেলার বিবিন্ন গ্রামে ব্যাপক লুটতরাজ ও দাঙ্গা সৃষ্টি করে। তারা কৃষকদের সর্বস্ব লুটে নেয়। এতে দেশে শুরু হয় ভয়াবহ অবস্থা। সন্ন্যাসী বিদ্রোহ কিছুটা দমন হলে ১৮১৫ সালে তৎকালীন ময়মনসিংহ জেলার ম্যাজিষ্ট্রেট মি. ইয়ার মাদারগঞ্জ এলাকায় আইন শৃঙ্খলা ও সরকারী ফরমান জারী করার জন্য ১৩ জন চৌকিদার নিয়োগ করেন।১৮৪৫ সালে জামালপুর মহকুমা প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর ১৮৮২ সালে মাদারগঞ্জ একটি পুলিশ ফাডিঁ স্থাপন করা হয়। ফাঁডি স্থাপনের ২৪ বছর পর ১৯০৬ সালের ১৫ জুন পূর্ববঙ্গ আসাম গেজেটে মাদারগঞ্জ পুলিশ ফাঁডিকে পূর্নাঙ্গ থানায় রুপান্তর করা হয়। মাদারগঞ্জ সেই থেকে একটি থানার নাম। বর্তমানে ইহা একটি উপজেলার নাম।
বকশীগঞ্জ উপজেলাঃ
বকশীগঞ্জ নামকরনটি নিয়ে রয়েছে নানান মতভেদ । কেউ কেউ বলেন অনেক অনেক দিন আগে এখানে নাকি “বকশী”নামে অলেৌকিক ক্ষমতা সম্পন্ন এ মুসলিম ফকির ছিলেন । তাকে কেন্দ্র করে একটি খনকা বা আস্তানা গড়ে উঠে ; আর এই আস্তানাকে কেন্দ্র করেই ধীরে ধীরে গড়ে উঠে একটি ছোট হাট । সেই অলেৌকিক ক্ষমতা সম্পন্ন ব্যক্তির নাম অনুসারে এর নাম হয় বকশীর হাট । কালের বিবর্তনে অতীতের বকশীর হাট বর্তমানে “বকশীগঞ্জ”নামে পরিচিত ।“১৯৮২ ইং সালের ৩০ শে এপ্রিলের আগ পর্যন্ত বকশীগঞ্জ একটি উইনিয়ন ছিল । ১৯৮২ ইং সালের ৩০ শে এপ্রিল দেোয়ানগঞ্জ থানা থেকে ০৫ টি এবং শ্রীবরদী থানা থেকে ০২ টি ইউনিয়ন নিয়ে মোট ০৭ টি ইউনিয়ন পরিষদের সমন্বয়ে অপরাহ্নে ঘোষনার মাধ্যমে বকশীগঞ্জ “ইউনিয়ন”থেকে বকশীগঞ্জ “থানা” উন্নীত করা হয় । এর ঠিক ১৭ ( সতের) মাসের মাথায় অর্থাৎ ১৯৮৩ইং সালের ১৪ই সেপ্টম্বর বকশীগঞ্জ থানা কে “বকশীগঞ্জ উপজেলায়” উন্নীত করা হয়
জামালপুর জেলা ও এর উপজেলা সমূহের নামকরনের ইতিহাস
Reviewed by sm sohage
on
August 01, 2018
Rating:
বেশ ভালো লাগলো। তথ্যনির্ভরশীল হওয়ায় জানার তৃপ্তিটা কিছুটা হলেও মিটেছে।তবে তথ্যের সূত্রগুলো দিলে আরো ভালো হতো। তবে ইসলামপুরের বা অন্যান্য এলাকার বংশের উদ্ভব কীভাবে ঘটল সেই তথ্যগুলো দিলে আরো ভালো হতো।
ReplyDelete