প্রাচীনতম জনপদ নরসিংদীতে গড়ে উঠেছে দেশের সর্ববৃহৎ কাপড়ের হাট। আর এই কাপড়কে কেন্দ্র করে নরসিংদীর ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে সারা দেশে। পাইকারি কাপড় মানেই যেন নরসিংদী। আর এই কাপড়ের বাজারের নাম হলো ‘বাবুরহাট’। বাবুরহাটে মোকাম করার জন্য দেশের বড় বড় কাপড় কোম্পানিগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা থাকে। এখানে মোকাম না করলে তাদের ব্যবসার অপূর্ণতা থেকে যায়। হিন্দু সম্প্রদায়ের এক জমিদার বাবু এই বাজার প্রতিষ্ঠা করেছেন। আর তিনিই এর নাম দেন ‘বাবুরহাট’। নামে বোঝা যায় যেন অনেকটা বাবুদের হাট ছিল এটি। আসলেই এক সময় মেঘনা নদীর পাড়ঘেঁষা এই বাজারে বিভিন্ন এলাকার বাবুরা তাদের উৎপাদিত কাপড়সহ বিভিন্ন পণ্য মোকাম করতেন বলে জানান এখানকার প্রবীণরা। কিন্তু এখন আর বাবুরহাট বাবুদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এখন এটি সার্বজনীন বাজারে রূপ নিয়েছে। এই বাজারকে কেন্দ্র করে নরসিংদীসহ আশপাশের কয়েকটি জেলায় গড়ে উঠেছে লাখো তাঁতশিল্প। আর এসব তাঁতশিল্পে উৎপাদিত হয় বিভিন্ন ধরনের কাপড়। এসব কাপড় বাবুরহাটে নিয়ে পসরা সাজিয়ে বসেন ছোট-বড় ব্যবসায়ীরা। স্থানীয় জমিদার হলধর সাহা ১৯৩৪ সালে নিজের প্রায় ১১ একর জমিতে বাজারটি প্রতিষ্ঠা করেন। অল্প সময়ের মধ্যেই এটি দেশব্যাপী খ্যাতি অর্জন করে। বর্তমানে এ হাটে ৫ হাজারেরও বেশি দোকান রয়েছে। এমন কোনো কাপড় নেই যা এখানে পাওয়া যায় না। ৮৩ বছরের পুরনো পাইকারি এই কাপড়ের হাটে প্রতিদিন বেচাকেনা হয় কোটি কোটি টাকার কাপড়। নরসিংদী শহর থেকে ১২ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত বাবুরহাট এক সময় শুধু রবিবার বসত। চাহিদা ব্যাপক থাকায় এখন সপ্তাহে দুই দিন শুক্র ও শনিবার হাট বসে। তবে ঈদ এলে সপ্তাহজুড়েই চলে কেনাবেচা। বাবুরহাটে বিক্রি হওয়া থানকাপড়, পপলিন কাপড়, ভয়েল কাপড়, সুতি, শাড়ি, লুঙ্গি ও থ্রি-পিস নরসিংদী, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকার তাঁতশিল্পে উত্পন্ন। শুধু তাই নয়, দেশের বিভিন্ন এলাকায় উৎপাদিত নাইট কুইন, দেশি জর্জেট, লেজার জর্জেট, জাপানি সিল্ক, টাঙ্গাইলের শাড়ি, জামদানি, কাতানসহ বিভিন্ন প্রকারের কাপড়ের সম্ভারে বাবুরহাট হয়ে উঠে বৈচিত্র্যময়। আর এই হাট থেকে কাপড় কিনে ব্যবসায়ীরা দেশের বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে যান। বাবুরহাটকে ঘিরে শুধু নরসিংদীর আনাচে-কানাচে গড়ে উঠেছে লাখো তাঁতকল। শুধু নরসিংদীতেই নয়, পার্শ্ববর্তী গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জেও গড়ে উঠেছে হাজার হাজার তাঁতকল। বাবুরহাটকে সংস্কার করে শেখেরচর নামে নামকরণ করেছে স্থানীয়রা। তবে ব্যবসায়ীরা বাবুরহাট নামেই চেনেন। এখানে শুধু পাইকারি ব্যবসায়ীরাই কাপড় কেনেন তা নয়, এখানে সাধারণ ক্রেতারাও আসেন কাপড় কিনতে। বাবুরহাট মানে কাপড়ের ভাঁজে ভাঁজে রঙের গন্ধ। বেশি ক্রেতা বেশি বিক্রি।
সরেজমিন দেখা গেছে, দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ব্যবসায়ীরা ভিড় জমিয়েছেন বাবুরহাটে। ফলে হাটের সরু গলিগুলোতে সারাক্ষণ ভিড় লেগেই রয়েছে। হাটের দোকানগুলোতে থরে থরে সাজানো বিভিন্ন প্রকারের কাপড়। পাইকারি ক্রেতারা রং ও ডিজাইন দেখে পছন্দমতো কাপড় আলাদাভাবে জড়ো করছেন। বাহারি রং ও ডিজাইনের কাপড় এখানে পাওয়া যায়। বাজারের পাশে দাঁড়িয়ে আছে শত শত ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, পিকআপসহ বিভিন্ন ধরনের গাড়ি। আর এসব গাড়িতে করে দেশের বিভিন্ন স্থানে নেওয়া হয় কাপড়। দেখলে মনে হয় যেন কাপড়ের মেলা বসেছে। ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, পিকআপে সারা দিনই কাপড় ওঠানোর কাজে ব্যস্ত শ্রমিকরা। এক যুগ ধরে বাবুরহাটে আসছেন হবিগঞ্জের কাপড় ব্যবসায়ী সাজু মিয়া। তিনি বলেন, নিরাপদ পরিবেশ ও এক স্থানে সব কাপড় পাওয়ায় আমরা এই হাটে আসি। গাজীপুরের কাপাসিয়ার বড় কাপড় ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম শাহীন বলেন, খুব কাছে এবং সবচেয়ে বড় মোকাম নরসিংদীর বাবুরহাট। এখান থেকে কেনা কাপড়ে ব্যবসাও ভালো হয়।
তথ্য সুত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন
No comments: